স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)
আমাদের মূল্যবান সুন্দর মনুষ্য জীবনে মাতা দুর্গা, জগজ্জননীর আগমনে আজ সবাই আনন্দিত, মুখরিত প্রাণ। কিন্তু, নিত্যদিন সমাজে সংসারে পরিবারে আমি/তুমি, আমার/তোমার মায়ের সাথে যেমন আচরণ করব, জীবনও আমার/তোমার সাথে তেমন আচরণ করবে। মা হলেন ভালোবাসা ও জীবনের উৎস এবং দায়িত্ব।একজন মা গঠিত হন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে, একটি ভালোবাসা, যা কেউই তোমাকে দিতে পারবে না। তাই তাকে বিচার কোরো না। কতোবার তুমি মায়ের পাশে বসে তার কথা শুনেছ? তার অতীত নিয়ে কখনো কথা বলেছ? হয়তো তিনি কখনোই তোমাকে বলেননি যে, তোমার আসার আগে তাকে কতটা দুঃসহ জীবন পার করতে হয়েছে।হয়তো তিনি কখনো শেয়ার করেননি তার বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষতগুলো, সেই দাগগুলো, যা স্মৃতির আঘাতে বারবার নতুন হয়ে ওঠে। কষ্টময় শৈশব ও কৈশোরের অভিজ্ঞতা, সেই কঠিন মুহূর্তগুলো, যখন কেউ তাকে শোনেনি, তাকে অবহেলা করেছে। কঠিন সময়ের ছাপ পড়েছে তার মনে। রূঢ় কথা, দারিদ্র্য, ভয়, অবজ্ঞা ও নির্যাতনের অসংখ্য স্মৃতি।তার হৃদয়ে হয়তো অজস্র দুঃখ লুকিয়ে আছে, যা তিনি তোমার সঙ্গে কখনোই শেয়ার করেননি। শুধু তোমার কাছে তার জীবনের ভুল দিকগুলো তুলে ধরতে চাননি বলে। ভালোবাসার জন্য তিনি তা বলেননি, বা হয়তো নীরবতাই ছিল তার একমাত্র আশ্রয়, যেন তিনি আর কষ্ট না পান।তাকে সম্মান করো, ভালোবাসো, কারণ তিনি তোমার জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। তাকে ভালো রাখলে, তোমার জীবন আশীর্বাদ, শান্তি, আনন্দ, স্থিতিশীলতা, এবং দীর্ঘায়ুতে পরিপূর্ণ হবে। এবং মনে রেখো? তুমি তোমার মায়ের সাথে যেমন আচরণ করো, অন্যরাও তোমার সাথে তেমনই আচরণ করবে। চারপাশের মানুষ তোমার কর্ম থেকে শিখবে, তোমার ভালোবাসা দেখবে।একজন মা শুধু একজনই থাকেন। যদি তাকে এখন মূল্য না দাও, তাহলে একদিন আফসোসের দীর্ঘ রাতগুলো তোমাকে তাড়া করবে। সেই রাতে তোমাকে ঘুমোতে দেবে না তোমার মায়ের স্মৃতিচারণা বরং তোমার নিজেরই অমান্যতা ও অবজ্ঞার স্মৃতিগুলো তোমাকে তাড়া করে ফিরবে, তোমাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না…! তাই, এই গানটির মাধ্যমে বলা হয়েছে যে:খড়ের প্রতিমা পূজিস্ রে তোরা, মাকে তো তোরা পূজিস্নে! প্রতি মা’র মাঝে প্রতিমা বিরাজে, হায় রে অন্ধ, বুঝিস্নে। এখন প্রতিটি মন্ডপে এই গানটি উচ্চ স্বরে বাজছে। এই গানের মূলকথা হলো, মানুষ শুধুমাত্র খড়ের/মাটির তৈরি দেবপ্রতিমা পূজা করে কিন্তু নিজেদের জীবনে থাকা মা বা জননীকে সঠিকভাবে সম্মান ও পূজা করে না। গানের কথাগুলি থেকে বোঝা যায় যে, প্রতিটি মা-ই এক একজন প্রতিমা, অর্থাৎ প্রতিটি মা-ই দেবীর মতো। কিন্তু মানুষ অন্ধ হয়ে এই সহজ সত্যটি সরল কথাটি বুঝতে পারে না। পরিশেষে বলি পৃথিবীর সকল মা ভালো থাকুন। জগৎ জননী ভুবনমোহিনী, আনন্দময়ী মায়ের কাছে এই প্রার্থনা করি। মাতা-পিতার শুভ ও মঙ্গলময় আশীর্বাদ সকলের শিরে বর্ষিত হোক। জগৎগুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ সকলের শিরে বর্ষিত হোক…এই প্রার্থনা করি।