বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতের অতি পরিচিত নাম তাহসান রহমান খান। প্রায় আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি গানের পাশাপাশি অভিনয় ও গান লেখার মাধ্যমে দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করে এসেছেন। অথচ সম্প্রতি হঠাৎ করেই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উধাও হয়ে গিয়েছেন তিনি। প্রায় এক কোটি ফলোয়ার থাকা নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং সাড়ে তিন মিলিয়ন ফলোয়ার থাকা ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল, দুটোই হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। ভক্তদের উদ্দেশে এই পদক্ষেপের কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যাও দেননি গায়ক।আর এর মাঝেই অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে সম্প্রতি হাজার হাজার ভক্তকে চমকে দিলেন তাহসান। মঞ্চে গান গাওয়ার মাঝেই তিনি ঘোষণা করলেন— “অনেকে লিখছে এটা আমার শেষ কনসার্ট। আসলে শেষ কনসার্ট নয়, শেষ ট্যুর। ধীরে ধীরে হয়তো আমার সঙ্গীতজীবনে দাঁড়ি টানব। স্বাভাবিক ব্যাপার। মেয়েটা বড় হচ্ছে এখন। আমি যদি স্টেজে দাঁড়িয়ে গান গাই—‘দূরে তুমি দাঁড়িয়ে’—কেমন দেখাবে সেটা?” শিল্পীর বক্তব্য শোনামাত্রই এক মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা প্রেক্ষাগৃহ। ভিড়ের মধ্য থেকে ভেসে আসে হাজারো কণ্ঠে প্রতিবাদ- “না, না!” অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে চোখ মুছতে থাকেন। কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে তাহসান জানিয়ে দেন, এটা তাঁর পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত। তারপর ফের গাইতে শুরু করেন নিজের জনপ্রিয় সব গান।গত সোমবার, অল্প কথায় সংবাদমাধ্যমকে তাহসান বলেন, “সাধারণ একটা জীবন যাপন করার আশা থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”এইমুহুর্তে পেশাদার সঙ্গীতে ২৫ বছর পূর্তির উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ায় সফরে আছেন তাহসান। ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড ও সিডনিতে একের পর এক কনসার্ট মাতিয়েছেন তিনি। হাজারো ভক্ত একসঙ্গে গেয়েছেন তাঁর চিরচেনা সব গান। এই দূর দেশের প্রতিটি শহরের দর্শকের ভিড় প্রমাণ করেছে—তাহসানের জনপ্রিয়তা আজও অটুট। কিন্তু মেলবোর্ন কনসার্টেই এল এই আকস্মিক ঘোষণা। সফরের শেষ শো পার্থে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তারপর ধীরে ধীরে তিনি সরে যাবেন মঞ্চ থেকে—এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন শিল্পী।শিল্পী থেকে পিতৃত্ব—অগ্রাধিকার বদলের গল্পই যেন সহজ-সরলভাবে বুনতে চাইছেন তাহসান। বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় শিল্পী সবসময়ই জানিয়েছেন, সঙ্গীত তাঁর কাছে আবেগের জায়গা। কিন্তু বয়স, সময় আর জীবনযাপনের পরিবর্তন তাঁকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। মেয়ের বড় হয়ে ওঠা তাঁর জীবনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তবে তাহসানের এহেন পদক্ষেপের থেকেই স্পষ্ট, একজন শিল্পীর পাশাপাশি একজন বাবা হিসেবে নিজের দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন তাঁর অগ্রাধিকার।বাংলা রকের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’–এর সঙ্গেই শুরু তাহসানের সঙ্গীতজীবন। ১৯৯৮ সালে জন কবীর, জাহান ও টনির হাতে গড়া এই ব্যান্ডে পরে যোগ দেন তাহসান ও মিরাজ। ২০০২ সালে মুক্তি পায় তাঁদের প্রথম অ্যালবাম ‘আমার পৃথিবী’, যা তুমুল সাড়া ফেলে তরুণদের মাঝে। এরপর একক শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করে তাহসান জনপ্রিয়তাকে আরও দৃঢ় করেন।তাহসানের এই ঘোষণার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন। কেউ লিখেছেন—“তাহসান ছাড়া আমাদের কল্পনাই করা যায় না।” কেউ আবার আশা প্রকাশ করেছেন, “হয়তো কিছুদিন বিরতির পর ফিরবেন।” কিন্তু প্রখ্যাত গায়ক যে নিজেই জানিয়েছেন, সঙ্গীতজীবনে আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। একদিকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তাঁর রহস্যজনক সরে দাঁড়ানো, অন্যদিকে শেষ ট্যুরের ঘোষণা- সব মিলিয়ে ভক্তদের মনে দগদগে প্রশ্নচিহ্ন। তাহসান কি সত্যিই মঞ্চ থেকে চিরবিদায় নিচ্ছেন, নাকি এ শুধু সাময়িক বিরতি?অবশ্য বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’কে এই বিষয়ে তাহসান বলেছেন, “মেয়ের কথাটা এসেছিল বয়স বোঝাতে। দাড়ি পেকে যাচ্ছে সব, এখন আর নিজের কাছেই প্রেমের গান গেয়ে মঞ্চ মাতানোটা মানানসই লাগে না। অনেকের জন্য হয়তো সহজ, আমার জন্য একটু বেমানান। তাছাড়া, পাবলিক ফিগার হিসেবে বেঁচে থাকার ভারটা অসম্ভব বেশি। তা আর নিতে চাই না।”পাশাপাশি আরও বলেন, “তিনটি গান তৈরি আছে। কিন্তু আর রিলিজ করব না। ‘পোরসেলিনা তাহসান’স প্লেলিস্ট’ প্রকল্পের শেষ গানটা হয়তো শুধু প্রকাশিত হবে। তারপর শেষ। এরপর আর কোনও নতুন গান প্রকাশ করব না।”