বিশ্বকর্মা পূজা এবং অরন্ধন, বাংলায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু উৎসব। যদিও এই দুটি ভিন্ন ভিন্ন উৎসব, তবুও একটির সঙ্গে অপরটির সম্পর্ক ও রয়েছে। কারণ বিশ্বকর্মা পূজার পরের দিনেই অরন্ধন পালন করা হয়। বিশ্বকর্মা পূজা মূলত কারিগর তথা মিস্ত্রি শিল্পী, স্থপতি এবং কারখানার শ্রমিকরা মূলত পালন করে থাকেন। ভাদ্র মাসের শেষ দিনে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, বিশ্বকর্মা হলেন দেবশিল্পী বা দেবতাদের স্থপতি। তিনি দেব-দেবীর বাসস্থান, অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরি করেছিলেন। বিশেষ পরিছন্নতার সাথে এই দিনে কারখানার যন্ত্রপাতি, কলকব্জা এবং অন্যান্য সরঞ্জামকে পূজা করা হয়। শ্রমিকরা এই দিনে কাজ থেকে ছুটি নেন এবং তাদের কর্মস্থল পরিষ্কার করে সাজিয়ে তোলেন। অনেক জায়গায় এই দিনে প্রতিযোগিতা মূলক ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন রয়েছে। এটি মূলত শ্রমিক ও কারিগরদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের কাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি উৎসব।অরন্ধন বিশ্বকর্মা পূজার পরের দিনই আসে অরন্ধন। অরন্ধন শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো ‘যেদিন রান্না করা হয় না’। অর্থাৎ এই দিনটিতে দেবী মনসা ও শীতল ষষ্ঠীর পূজা করা হয়। এই পূজার প্রধান উদ্দেশ্য হলো সর্পদংশন থেকে রক্ষা পাওয়া এবং পরিবারের সদস্যদের সুস্থ রাখা।অরন্ধনের আগের দিন অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পূজার দিন রান্না করা হয় এবং সেই বাসি খাবারই অরন্ধনের দিন খাওয়া হয়। এই বাসি খাবারের মধ্যে পান্তা ভাত, একাধিক পদের রান্না বিভিন্ন ধরনের বাসি তরকারি, ভাজাভুজি পায়েস পিঠেপুলি ইত্যাদি থাকে। এটি মূলত মনসা দেবীর পূজার একটি অংশ, যেখানে নতুন করে কোনো রান্না করা হয় না। এই প্রথাটি মূলত মা-বোনেরা পালন করে থাকেন। এই দুটি উৎসবের মাধ্যমে বাংলার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য ফুটে ওঠে, যেখানে একদিকে শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়, অন্যদিকে দেবী মনসার পূজার মাধ্যমে পরিবারের মঙ্গল কামনা করা হয়। আর এই বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে একাধিক প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে বিশেষ করে শিশুদের সাঁতার উল্লেখযোগ্য।