চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির ইস্তফা

IMG-20250909-WA0121

সংসদ ভবনে আগুন, রাস্তায় ফেলে মার মন্ত্রীদের  

গণবিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ নেপাল। যত সময় গড়াচ্ছে ততই সরকার বিরোধী আন্দোলন মারমুখী হয়ে উঠছে পড়শি দেশে। কারফিউ উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখান মানুষ। সংসদ ভবনে আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। শুধু তাই নয়, রাস্তায় ফেলে নেতা-মন্ত্রীদের মারধরও করা হয়। চাপে পড়ে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী সহ ১১ জন মন্ত্রী। জেন-জি বিক্ষোভে নেপালে ওলি সরকারের পতনের ঘটনা বাংলাদেশের কথা মনে করাচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশেও ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন শেখ হাসিনা।  সোমবার সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ব্যান তুলে নিলেও নেপালে আন্দোলন থামেনি।কারফিউ উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার ফের পথে নামতে দেখা যায় নেপালের ছাত্র-যুবদের। এদিন সকালে কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বর এবং অন্য এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। কাঠমান্ডু জেলার কালেঙ্কি এবং বানেশ্বরে, ললিতপুর জেলার চাঁপাগাঁও-সহ বেশ কিছু এলাকায় বিক্ষোভ শুরু। কালেঙ্কিতে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয়। কয়েক জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। নেপালের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।  নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেলের বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা সিপিএন নেতা প্রচণ্ডের বাসভবনেও আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এ ছাড়া সদ্য ইস্তফা দেওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুংয়ের বাসভবনেও আগুন ধরানো হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে নেপালি কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট শের বাহাদুর দেউবার বাড়িতে, নেপালি কংগ্রেসের সদর দফতরে। এ ছাড়া ইউএমএল নেতা মহেশ বাসনেত, নেপালি কংগ্রেসের নেতা গগন থাপার বাড়িতেও আগুন ধরানো হয়েছে। এরই মাঝে উত্তেজিত জনতার হাতে  আক্রান্ত হন  নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা এবং তাঁর স্ত্রী আরজু রানা দেউবা। আরজু বর্তমানে নেপাল সরকারের বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্বেও রয়েছেন।  সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার থেকেই বিদ্রোহ শুরু করেন নেপালের ছাত্র-যুবরা। পুলিশ গুলি চালায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন  বিক্ষুব্ধের মৃত্যু হয়। শেষে ছাত্র-যুবদের আন্দোলনের মুখে সোমবার রাতেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় নেপাল সরকার। কিন্তু এর পরেও বিদ্রোহ থামেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের দাবিতে বিদ্রোহ আরও জোরালো হয়। একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে থাকেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এই বিদ্রোহের মাঝেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন ওলি। কিন্তু এর পরেও বিক্ষোভ থামেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই পরিস্থতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয় নেপালের পার্লামেন্টে। গোটা পার্লামেন্ট ভবন ঘন কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। মঙ্গলবার দুপুরে নেপালের সুপ্রিম কোর্টেও উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর চলে নেপালের অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরেও।  বিদ্রোহের মাঝে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন  কেপি শর্মা ওলি। সোমবার থেকেই ওলির পদত্যাগের দাবি উঠতে শুরু করেছিল। মঙ্গলবার সকালেই নেপালের সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা হয় ওলির। ওলিকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিল সেনাই। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনে ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নেপালের ত্রিভূবন বিমানবন্দর। সেনা  মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে।  নেপালের বিভিন্ন মন্ত্রীকে তাঁদের বাসভবন থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়। 

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement