ডিএ মামলার শুনানি শেষ, রায়দান স্থগিত

IMG-20250829-WA0097

ডিএ মামলার শুনানিতে সোমবার রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতে জানান, ‘কোনও আদালতই এআইসিপিআইয়ের হার মেনে ডিএ দিতে বাধ‍্য করতে পারে না কোনও রাজ‍্যকে। যদি না রাজ‍্যের নিজস্ব নোটিফিকেশনে সেটার উল্লেখ থাকে। রাজ‍্যের কোনও নোটিফিকেশনে এআইসিপিআই মানার কথা উল্লেখ করা হয়নি।’ এর পাশাপাশি রাজ‍্য সরকারের আইনজীবী এও বলেন, ‘এআইসিপিআর মানতে কোনও রাজ‍্যকে বাধ‍্য করা মানে রাজ‍্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ এবং সংবিধানের অবমাননা করা হবে।’ এদিকে এদিন সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানিতে বিচারপতি সঞ্জয় কারোলের বেঞ্চে শুনানির সময় রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, শুনানিতে বারবার দেরি করে আসার জন্য। বিরোধীদের তরফে টানা তিনদিন কপিল সিব্বলের জন‍্য অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে আপত্তি জানান। এরপরই সিব্বলকে ছাড়াই শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টে।

এরপই বিচরপতিরা জানতে চান, এআইসিপিআর নিয়ে কোনও সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে কিনা। এই নির্দেশের জেরে বাংলা সহ আরও ৭টি রাজ্য, যাঁরা কেন্দ্রের হারে ডিএ দেয় না এবং এআইসিপিআই মানে না, তাঁদের ওপরও প্রভাব পড়বে বলে জানান রাজ‍্যের আইনজীবী। যদিও সংবিধানের ৩০৯ ধারার উলঙ্ঘন করা হচ্ছে সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে, এমনই দাবি এদিন করতে দেখা যায় বিরোধী আইনজীবী করুনা নন্দীকে।

এর প্রেক্ষিতে রাজ‍্যের আইনজীবীরা পাল্টা বলেন, ‘কেন্দ্রের নিয়ম মানতে রাজ্য বাধ‍্য নয়।’ উত্তরে করুনা নন্দী পাল্টা বলেন, ‘কিন্তু আমাদের তরফে সেটা বলাই হচ্ছে না। আমরা বলছি রাজ‍্য যখন এআইসিপিআর মেনে রোপা তৈরি করেছে, তখন তাঁরা সেই হারকে মানুক।’ উত্তরে রাজ্যের তরফে কপিল সিব্বল বলেন, ‘রিজিয়ন থেকে রিজিয়নে আলাদা হওয়া উচিত, কারণ প্রতি রিজিওনের নিজস্ব ইনফ্লেশন আছে, কস্ট অফ লিভিং আছে। তাই আবারও আবেদন জানাচ্ছি ডিএ-র বিষয়টি রাজ্যের হাতেই ছাড়া হোক।’  

এরপর কপিল সিব্বল এও বলেন, রিজিয়ন থেকে রিজিয়নে আলাদা হওয়া উচিত। কারণ প্রতি রিজিওনের নিজস্ব ইনফ্লেশন আছে, কস্ট অফ লিভিং আছে। তাই আবারও আবেদন জানাচ্ছি ডিএর বিষয়টি রাজ্যের হাতেই ছাড়া হোক। এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন,  ‘রিজিয়ন থেকে রিজিয়নে আলাদা হওয়া উচিত। কারণ প্রতি রিজিওনের নিজস্ব ইনফ্লেশন আছে, কস্ট অফ লিভিং আছে। তাই আবারও আবেদন জানাচ্ছি ডিএর বিষয়টি রাজ্যের হাতেই ছাড়া হোক।’

অবশেষে সর্বোচ্চ আদালতে ডিএ মামলার শুনানি এদিনই শেষ করে সুপ্রিম কোর্ট। তবে রায়দান স্থগিত রেখেছে শীর্ষ আদালত। এরপর দু’পক্ষকে কমপ্রিহেনসিভ লিখিত সাবমিশন দিতে বলেন বিচারপতিরা। সরকার পক্ষকে ২ সপ্তাহের মধ‍্যে কমপ্রিহেনসিভ রিপোর্ট দিতে বলে। এর এক সপ্তাহের মধ‍্যে বিরোধীরা তাঁদের জবাব দেবেন।

প্রসঙ্গত, রাজ্যকে আগেই ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। এ জন্য ছ’সপ্তাহ সময়ও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়সীমার মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দিতে পারেনি। বরং আদালতের কাছ থেকে আরও ছ’মাস সময় চাওয়া হয়। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গত ৪ অগস্ট থেকে ৭ অগস্ট প্রতি দিনই শুনানি চলেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে। এরপর  কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের হারে রাজ্যকেও ডিএ দিতে হবে, এই দাবিকে সামনে রেখে শুরু হয় মামলা। স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (এসএটি), কলকাতা হাই কোর্ট হয়ে মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ২০২২ সালে কলকাতা হাইকোর্ট সরকারি কর্মীদের পক্ষে রায় দেয়। উচ্চ আদালত বলে, ডিএ রাজ্য সরকারের কর্মীদের অধিকার। কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে তা পাওয়ার যোগ্য।

এরপর এই  রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যকে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছে, আরও সময় প্রয়োজন। আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে বকেয়া ডিএ সংক্রান্ত কোনও বরাদ্দ ছিল না। তারা সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ পুনর্বিবেচনারও আর্জি জানায়।

এদিকে রাজ্যের যুক্তি ছিল, মহার্ঘ ভাতা বাধ্যতামূলক নয়। ডিএ কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়। তা ছাড়া কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক পরিকাঠামো ভিন্ন। কেন্দ্র যে হারে ডিএ দেয় তার সঙ্গে রাজ্যের তুলনা চলে না। অন্য দিকে, মামলাকারী পক্ষের যুক্তি, নির্দিষ্ট সময়মতো ডিএ দেওয়া সরকারের নীতির মধ্যে পড়ে। খেয়ালখুশি মতো ডিএ দেওয়া যায় না। তাদের দাবি, বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ডিএ দিতে হবে। প্রয়োজনে বকেয়া ডিএ কিস্তিতে দেওয়া হোক। এই মামলারই শুনানি শেষ হল সুপ্রিম কোর্টে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement