শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অ্যাডমিটের সঙ্গে আনতে হবে আধার এবং ভোটার কার্ডও

06_08_2022-aadhar_voter_22958379

৭ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিতে চলেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা রয়েছে। আর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হবে ১৪ সেপ্টেম্বর। এবার চাকরিপ্রার্থীদের জন্য নতুন নির্দেশ জারি করল স্কুল সার্ভিস কমিশন। তারা জানিয়ে দিল, পরীক্ষাকেন্দ্রে আধার কার্ড কিংবা ভোটার কার্ড নিয়ে আসতে হবে প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীকে।
স্কুল সার্ভিস কমিশন জানিয়েছে, পরীক্ষায় বসার জন্য অনলাইনে আবেদন করার সময় অনেক চাকরিপ্রার্থীই ছবি ও সই আপলোড করেননি। এদিকে চাকরিপ্রার্থীকে আবেদনপত্রের সঙ্গে ছবিও আপলোড করতে হয়। এটা বাধ্যতামূলক। এসএসসি-র তরফে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে যে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, তাতে সব অ্যাডমিট কার্ডে ছবি ছিল। এবারও আবেদনকারীরা আবেদনপত্রের সঙ্গে ছবি আপলোড করেছেন। কিন্তু, যে ফরম্যাটে ছবি আপলোড করতে বলা হয়েছিল, তা অনেকে করেননি। এসএসসি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেইমতো আবেদনপত্র বাতিল হলে বহু চাকরিপ্রার্থীর আবেদনই বাতিল হয়ে যেত। আবার সুপ্রিম কোর্ট প্রত্যেক যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষককে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। ফলে সঠিক ফরম্যাটে ছবি আপলোড না হওয়ার জন্য আবেদনপত্র বাতিল হলে অনেক যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকও হয়তো বাদ পড়তেন। তাতে নতুন করে বিতর্ক বাধত। তাঁদের সুযোগ দিতে গিয়েই নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেও ছবি সঠিক ফরম্যাটে আপলোড না হলেও পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, একই যাত্রায় পৃথক ফল হতে পারে না।
এসএসসি-র আধিকারিকরা বলছেন, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ৫ লক্ষের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। আবার আদালতের নির্দেশে পরীক্ষায় বসার আবেদন গ্রহণের জন্য ফের আবেদনের পোর্টাল খোলা হয়েছিল। এত কম সময়ে ম্যানুয়ালি অ্যাডমিট কার্ডের বিষয়টি দেখা সম্ভব নয়। ফলে ফরম্যাট মেনে ছবি না পাঠালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাডমিট কার্ড তৈরির ক্ষেত্রে সেই ছবি অ্যাডমিট কার্ডে থাকবে না। সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীকে আধার কিংবা ভোটার কার্ড আনতে বলা হয়েছে। যাতে পরীক্ষার্থীর পরিচয় যাচাই করা যায়। সেজন্যই শুধু অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে এসে এবার পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকা যাবে না। আধার কার্ড কিংবা ভোটার কার্ড সঙ্গে আনতেই হবে প্রত্যেককে। আর ওই আধার কিংবা ভোটার কার্ড খতিয়ে দেখার পরই পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে চাকরিপ্রার্থীদের। সেজন্য প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীকে ২ ঘণ্টা আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে বলা হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে পরীক্ষা। প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীকে সকাল ১০টার মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে যেতে হবে। ১০টার মধ‍্যে আধার কিংবা ভোটার কার্ড নিয়ে না পৌঁছলে ওই চাকরিপ্রার্থীকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের এই নির্দেশ বিতর্ক বেধেছে। ভোটার কার্ড কিংবা আধার কার্ড অনেকদিনের পুরনো হলে চাকরিপ্রার্থীর বর্তমান মুখের সঙ্গে মিল নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কী হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। এদিকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “চাকরিপ্রার্থীকে চিহ্নিত করতে যদি ছবির প্রয়োজন হয়, তবে তা সাম্প্রতিক ছবি হতে হয়। এটাই নিয়ম। আধার-ভোটার কার্ড তো কেউ গতকাল করেননি। অনেকদিন আগে করেছেন। সেক্ষেত্রে তাঁর মুখের আদলের পরিবর্তন হবে। আধার কার্ডের ছবি তোলার পর সেটা প্রিন্ট করার সময় একটু পরিবর্তন হয়। অনেকদিন হয়ে গেলে আরও সমস্যা হয় সেই ছবি দেখে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে। ফলে অনেক সমস্যা হবে। হয়তো সেই সমস্যা জিইয়ে রাখতেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
এসএসসির এই নির্দেশে সরব আইনজীবী ফিরদৌস শামিমও। তিনি বলেন, ‘এই যে ছবি-সই নেই, এরকম বিভিন্ন পদ্ধতিগত ত্রুটি রাখা হচ্ছে। একজনের পরীক্ষা অন্যজন দিয়ে চলে আসবে। আসলে এটা করাই হচ্ছে পদ্ধতিটিকে ত্রুটিযুক্ত ও দুর্নীতি করার জন্য।’ আর এই প্রসঙ্গেই আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ‘দুর্নীতি হলে ফের আদালত হস্তক্ষেপ করবে।’ একইসঙ্গে এও বলেন, ‘দুর্নীতি করলে তো আদালত হস্তক্ষেপ করবেই। আর যদি ভবিষ্যতে যদি দুর্নীতি হয়, তাহলে সমস্যা হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার তো দুর্নীতিগ্রস্ত কাজকর্মই করবে।’
এই প্রসঙ্গে বাম নেত্রী তথা অধ্যাপিকা নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ও এই নিয়ে সরব হয়েছেন। অ্যাডমিট কার্ডে ছবি না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনিও। তাঁর বক্তব্য, ‘বর্তমান প্রযুক্তিতে কেন ছবি আপলোড করা যাচ্ছে না, তার কোনও ব্যাখ্যা রয়েছে কি? সেরকম তো কিছু নেই। যখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হয়, তখনও অ্যাডমিট কার্ডে ছবি ও সই থাকে। যদি অ্যাডমিট কার্ডে ছবি না থাকে, তাহলে কার সঙ্গে কী মিলিয়ে দেখব? আধার কার্ড তো অনেক আগের হতে পারে।’
এ ব্যাপারে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবিরও। বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, ‘সরকারই তো চায় না পরীক্ষা হোক। সরকার চায় মামলা হোক। পরীক্ষা নিলে তো চাকরি দিতে হবে। চাকরি দিলে মাইনে দিতে হবে। কোথা থেকে মাইনে দেবে?’

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement