মেয়ো রোডে তৃণমূলের ধর্না মঞ্চ খুলে দিল সেনাবাহিনীর জওয়ানেরা৷ বাংলা ভাষা এবং বাঙালিদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদেই মেয়ো রোডে গান্ধি মূর্তির সামনে এই ধর্না মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল তৃণমূলের পক্ষ থেকে৷ সোমবার সেই ধর্না মঞ্চই খুলে দেয় সেনাবাহিনী৷ গান্ধি মূর্তি সামনে এই জায়গায় অতীতেও বহু ধর্না কর্মসূচির আয়োজন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ এদিকে এই ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত, বাংলা ভাষা এবং বাঙালিদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদে প্রত্যেক শনি এবং রবিবার এই ধর্না মঞ্চ থেকেই প্রতিবাদ জানানো হচ্ছিল শাসক দলের পক্ষ থেকে৷ তবে সোমবার সেনাবাহিনীর আধিকারিক এবং জওয়ানরা এসে সেই ধর্না মঞ্চ, বাঁশের তৈরি অস্থায়ী কাঠামো, হোর্ডিং সবই খুলে দেয়৷ পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পক্ষে এদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত তৃণমূল নেতাদের জানানো হয়, শুধু শনিবার এবং রবিবার ধর্নায় বসার অনুমতি নেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু একটানা এ ভাবে ধর্না মঞ্চ বেঁধে রাখা যাবে না বলেই দাবি সেনা কর্তৃপক্ষের৷ শুধু তাই নয়, যতদিনের অনুমতি নেওয়া ছিল, সেই সময়সীমাও পেরিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করা হয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে।

এরই প্রেক্ষিতে মমতা বলেন, ‘আমাকে জানালেন না কেন? আমাকে একটা ফোন করলেই তো বলে দিতাম।’ মেয়ো রোডে ধর্না মঞ্চের সামনে উপস্থিত হয়ে মমতা এদিন এও জানান, ‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব রয়েছে পুলিশের হাতে। তাই মঞ্চ নিয়ে সমস্যা থাকলে পুলিশকে জানাতে হত।’ পাশাপাশি এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মমতা তিনি এও বলেন, বিজেপি সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে। সঙ্গে এও বলেন, ‘আমি যখন আসছিলাম, তখন আমাকে দেখে প্রায় ২০০ সেনা ছুটে পালাল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা তো আমার বন্ধু। পালাচ্ছ কেন?’

এরপরই এদিনের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মমতা এও জানান, ‘আর্মিই শুধু বাকি ছিল। আর্মিকেও যদি মিস ইউজ করে, তাহলে সিকিউরিটি কোথায় থাকবে? একটা এজেন্সির নাম বলুন যারা নিরপেক্ষ? এরা সবাই বিজেপি পক্ষ।’ এর পাশাপাশি মমতা এও বলেন, ‘আমি সেনাকে সম্মান করি, কিন্তু এই কাজ সেনাকে দিয়ে বিজেপি করেছে।’ এরই রেশ টেনে মমতা এও বলেন, এই প্রোগ্রামের জন্য ২০ হাজার টাকা জমাও করেছে তৃণমূল। কোনও প্রোগ্রামও ছিল না অন্যদের। তাই মঞ্চ করা হয়েছে। মমতা বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া ২১ জুলাইও করিনা। গান্ধিমূর্তির পাদদেশেও করতে দেবে না? রেড রোডেও অনুমতি দেবে না নাকি?’ আর এই প্রসঙ্গে মমতার বক্তব্য, ‘কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবাদের মঞ্চ সরিয়ে দিতে চাইছে। এটা বিজেপি পার্টি করেছে। সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ থাকা উচিত।’

তবে মমতা এদিন এও জানিয়ে দেন, সেনাবাহিনীর দিকে কোনও ভাবে দায় চাপাবেন না। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, মেয়ো রোড থেকে সরিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হবে রানি রাসমণি রোডে। সে ব্যাপারে অনুমতিও নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিজেপির অনুমতি নিয়ে আমি কোনও কর্মসূচি করব না। আমার অনেক জায়গা আছে।’

এদিকে এদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত তৃণমূল নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, নতুন করে অনুমতির সেনাবাহিনীর কাছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছিল৷ দলের পক্ষ থেকে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন৷ এ দিনের ঘটনার সম্পর্কে বৈশ্বানর এও জানান, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে৷ এর পাশাপাশি বৈশ্বানরের সংযোজন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশেই এ ভাবে তৃণমূলের মঞ্চ খুলে দেওয়া হচ্ছে। বাংলা ভাষা এবং বাঙালিদের উপরে যে অত্যাচার চলছে আমরা তার প্রতিবাদ করছি৷ সেই প্রতিবাদকেই খর্ব করার চেষ্টা চলছে৷ বাংলা ভাষার উপরে দেশের অন্য রাজ্য অত্যাচার চলছে৷ এখানেও সেই অত্যাচার শুরু হল৷ একটা মঞ্চ খোলার জন্য সেনা নামাতে হচ্ছে আমার রাজনৈতিক জীবনে দেখিনি৷ যাঁরা বাংলা ভাষা এবং বাঙালিদের বিরোধী, তারাই এসব করাচ্ছে৷’