সপ্তর্ষি সিংহ
নিম্নচাপের দরুণ লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে বাংলায়। তার জেরে জেরবার অবস্থা পটো পাড়ার প্রতিমা শিল্পীদের। মাথার উপর কাজের প্রচুর চাপ। অথচ বৃষ্টিতে পণ্ড সেই কাজকর্ম। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রতিমা তৈরির সমস্ত কাঁচামালের দাম। যে কারণে আকাশ ছোঁয়া দামে প্রতিমা কিনতে পকেটে টান পড়ছে পুজো কমিটি থেকে মৃৎশিল্পীদের। দুর্যোগের ঘনঘটায় এখন লাগাতার বেগ পেতে হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এলাকার প্রতিমা শিল্পীদের। লাগাতার বৃষ্টির জন্য রোদের মুখ ক’দিন ধরে দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে প্রতিমা বাইরে শুকানোর ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিল্পীদের। তাই সময় মতো প্রতিমা তৈরি করাই এখন চ্যালেঞ্জ। গ্যাস পুড়িয়ে প্রতিমা তাড়াতাড়ি শুকানোর কাজ করতে হচ্ছে। অনেক জায়গায় আবার কাঠ-কয়লা পুড়িয়ে মাটি শুকোনোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু, কড়া রোদ ছাড়া এভাবে একাধিক প্রতিমা তৈরি কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে বলে মত কারিগরদের।
অন্যদিকে প্রতিমা তৈরির কাঁচামালের দামও আগুন ছোঁয়া। বৃষ্টির জন্য আচমকাই বেড়েছে খড়, বাঁশ ও কাঠের দাম। যার জেরে চরম বিপাকে পড়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা। একই চিত্র ধরা পড়েছে কুমোরটুলি পাড়ায়। টানা দু’মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। বৃষ্টির কোনও বিরাম নেই। কখনও নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি, তো আবার কখনও হালকা বা মাঝারি বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। বাস্তবে একটানা মেঘলা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার ফলেই মৃৎশিল্পীদের নাজেহাল অবস্থা। এক মৃৎশিল্পী জানান, টানা পাঁচ মাস ধরে তিনি দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করে থাকেন। তাঁর মধ্যে প্রায় আড়াই মাস চলে গেছে, কিন্তু বৃষ্টি কমছে না। একটানা বৃষ্টি আর খারাপ আবহাওয়া প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে বাদ সাধছে। ওদিকে প্রতিমা তৈরির খরচ ক্রমশ বাড়ছে। কুমোরটুলির এক প্রতিমা শিল্পী বলেন, “এই যা বৃষ্টি হচ্ছে। তাতে কীভাবে কী করি বলুন তো? গ্যাসের তাপেই শুকোতে হবে ঠাকুর। সেই কারণেই গ্যাস পুড়িয়ে ঠাকুর শুকোচ্ছি। দুর্গা পুজোর দেরী আছে। কিন্তু কীভাবে প্রতিমা শুকোবে জানি না। দুর্গা ঠাকুরও বানাচ্ছি। কিন্তু সেটা এখনও সময় আছে। তার আগে তো বিশ্বকর্মা পুজো। সেই কারণে বুঝতে পারছি না কী হবে। তাই গ্যাস জ্বেলেই শুকতে হচ্ছে।” প্রবীণ শিল্পীর বক্তব্য, ‘প্রতিমায় মাটির প্রলেপ দেওয়ার পরে রোদে শুকোতে হয়। কিন্তু তারই তো দেখা নেই। পুজো উপলক্ষে অনেকগুলো প্রতিমার অর্ডার নিয়ে ফেলেছি, কীভাবে শেষ করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’ মাতৃপ্রতিমা গড়ার কারিগররা প্রতিমা নির্মাণে প্রতিমুহূর্তেই শঙ্কায় ভুগছেন। একদিকে ভাবনা, সময়ের মধ্যে কীভাবে প্রতিমা সাজিয়ে পাঠাবেন, অন্যদিকে দুশ্চিন্তা, এই পরিস্থিতিতে কাজ কি আদৌ সম্পন করা যাবে? এই দ্বিমুখী চাপে এখন সব মৃৎশিল্পীরাই সময়মতো কাজ শেষ করতে পারা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমন সমস্যায় আগে কখনও পড়তে হয়নি বলেই জানাচ্ছেন আরও অন্যান মৃৎশিল্পীরা।