এসআইআর ইস্যুতে কয়েকদিন ধরেই কেন্দ্র ও নির্বাচ কমিশনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবহেই রাজ্যে ভোটার তালিকায় অবৈধ নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে কয়েকজন অফিসারকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। এমনকি অফিসারদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিশনের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই বুধবার ঝাড়গ্রাম থেকে হুঙ্কার ছাড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন অমিত শাহের হাতের পুতুল। যে দিকে নাচাবেন, সে দিকেই নাচবে।’’
ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের জেরে রাজ্যের চার সরকারি আধিকারিককে নিলম্বিত সাসপেন্ড করার কথা জানিয়ে সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠায় নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ওই চার সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশনের সেই পদক্ষেপেই ক্ষুব্ধ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কমিশনের ওই নির্দেশ মানা হবে না বলেই ঝাড়গ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর হুঙ্কার, ‘‘আমি কারও কোনও পানিশমেন্ট হতে দেব না।’’ নাম না করে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ‘বিজেপির বন্ডেড লেবার ’ বলেও আক্রমণ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যের সরকারি অফিসার এবং পুলিশকে ভয় দেখাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। মমতার অভিযোগ, এনআরসি চালুর উদ্দেশ্যেই এসআইআর-এর কাজ শুরু করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহারের রাজবংশী ভাষাভাষী তফসিলি জনজাতিভুক্ত মানুষকে আপনারা নোটিস পাঠাচ্ছেন অসম থেকে! এটা অপরাধ। এটা করতে পারেন না।’’ সেই সঙ্গে তাঁর আবেদন, ‘‘এনআরসি হবে না। এনআরসি মানি না। নোটিস পাঠালে কেউ যাবেন না। গেলেই জেলে পুরে দেবে।’’ বাঙালি ও বাংলা ভাষার ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে বুধবার ঝাড়গ্রামে পদযাত্রাও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদ হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে মিছিলে হাঁটেন তৃণমূল সুপ্রিমো।তাঁদের হাতে ছিল বাংলার মণিষীদের ছবি। মিছিল শেষে এক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসআইআর নিয়ে সরব হন। তিনি বলেন, “নাম বাদ দিতে হলে আমার দেহ পেরিয়ে যেতে হবে”। নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে হুঙ্কার ছেড়ে মমতা বলেন, “নাম বাদ দিতে হলে আমার দেহ পেরিয়ে যেতে হবে, এনআরসি মানছি না, মানব না।”
ছাব্বিশের ভোটের আগে বাঙালি আবেগে শান দিয়ে এদিন সিধু-কানহুর মাটিতে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক মতাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যের বার্তাও দেন মমতা। তিনি বলেন, “ভুলে যান পার্টি, ভুলে যান রাজনৈতিক দল। আপনার ঠিকানা, আপনাকেই রক্ষা করতে হবে। একটিও নাম যেন বাদ না যায়।” ২১ জুলাই মঞ্চ থেকে ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন মমতা। সেইমতোই বীরভূমের পর বুধবার ঝাড়গ্রামে পথে নামেন মমতা। কেন্দ্রকে বিঁধে তাঁর প্রশ্ন, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, স্বামী বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগর কোন ভাষায় কথা বলতেন? দেশের জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় স্তোত্র কোন ভাষায় রচনা করা হয়েছে।
মমতা বলেন, “স্বাধীনতা আন্দোলনের, নবজারণ শুরু করেছিল বাংলা। বাংলা ছাড়া ভারতবর্ষ হয় না। পৃথিবী হয় না।” পাশাপাশি অন্য রাজ্যে বাংলা বললেই বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা বলে দাগিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে শ্রমিকদের ফের বাংলায় ফিরে আসার ডাক দিয়েছেন মমতা। ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্তার প্রতিবাদে ‘ভাষা আন্দোলন’ কর্মসূচি শুরু করেছে তৃণমূল। তারই অংশ হিসেবে বুধবার ঝাড়গ্রামে মিছিল করেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর শহরের পাঁচমাথার মোড়ে সভা করেন তিনি। সেখান থেকেই বাঙালি হেনস্তা থেকে এনআরসি, একাধিক ইস্যুকে কেন্দ্রকে তুলোধোনা করেন তিনি। তাঁর সাফ কথা, পুরনো নথির দোহাই দিয়ে বাংলার ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, “এসআইআরের নেপথ্যে এনআরসি। ভয়ে মানুষ আত্মহত্যা করছে। কিন্তু কেউ ভয় পাবেন না। মানুষের অধিকার কাড়তে দেব না। বিজেপির চালাকি মানুষ বুঝে গিয়েছে। এনআরসি হচ্ছে না, হবেও না।” এরপরই অমিত শাহের জন্মের শংসাপত্রের প্রসঙ্গ শোনা যায় তাঁর মুখে। বলেন, “অমিত শাহ জন্মের শংসাপত্র দেখান।” অসম সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা।