ছাব্বিশের আগে বাঙালি আবেগে শান তৃণমূলের

IMG-20250716-WA0128

আবার ‘খেলা হবে’, হুঙ্কার মমতার

ছাব্বিশের আগে বাঙালি আবেগে শান দিয়ে পথে নামল তৃণমূল। আর সেই কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ‘বাঙালি হয়রানির বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কড়া ভাষায় বিঁধলেন কেন্দ্র ও বিজেপিকে। মমতার হুঁশিয়ারি, ‘বাংলাতেই কথা বলব, পারলে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে ভরুক’। ছাব্বিশের ভোটের আগে তাঁর হুঙ্কার, ‘খেলা হবে’। বাঙালির বিরুদ্ধে বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে বুধবার কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল। সেই মিছিলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে দেখা যায় তৃণমূল সুপ্রিমোকে। মিছিল শেষে ধর্মতলায় বক্তব্য রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সেই সভা থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘কী ভেবেছেন দিল্লিওয়ালারা, দেশের জামিদারি নিয়ে নিয়েছেন! যা খুশি, তাই করবেন’। মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, ‘আমাদের এখানে যে অবাঙালিরা আছে, তাঁদের উপরে অত্যাচার করতে দেব না। তেমনি বাঙালিদের উপরেও অত্যাচার করতে দেব না। বাংলা বললেই বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা বলে দিচ্ছেন! বাংলাদেশ তো আলাদা দেশ, রোহিঙ্গা তো মায়ানমারে থাকে। আমাদের এখানে কী! পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক, আইডি কার্ড আছে। আধার কার্ড আছে, প্যান কার্ড। বাইরে এমনি এমনি কাজ করছে না, দক্ষতা আছে। দক্ষতা আছে, তাই ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেউ সোনার কাজ করে, কেউ নির্মাণের কাজ করে কেউ ব্রিজ বানায়’। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে গরিব লোকগুলি কাজ করার জন্য এখান থেকে যায়, তাঁদের অনেক কষ্ট করতে হয়। বাংলায় থাকলে অনেক ভালো থাকতে পারে। তাঁদের দিয়ে কাজ করাবে, আর বাংলা ভাষায় কথা বললেই জেলে নিয়ে চলে যাবে। কেন? কোন অধিকারে? পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশ নয়! অনেক দেশ আছে, একই ভাষায় কথা বলে। তার এই নয় যে, তাদের জেলে ভরে দাও।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার একটি নোটিফিকেশন করেছে। সেটি আমরা চ্যালেঞ্জ করব। লুকিয়ে লুকিয়ে নোটিফিকেশন করে যেখানে বিজেপি আছে সেখানে পাঠিয়েছে। সেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, যাকেই সন্দেহ হবে, বাংলায় কথা বলে, তাঁকে অ্যারেস্ট করবে, ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও এমন করা হচ্ছে। বাঙালিদের ওপর এই অত্যাচার আমি মানব না। এখানেই থেমে থাকেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, শুনেছি বিহারে ৩০.৫ লক্ষ ভোট বাদ দিয়ে দিয়েছে। এভাবেই মহারাষ্ট্রে ওরা জিতেছে। না হলে পারত না। দিল্লিতেও এই সব করেই জিতেছে। বিহারেও সেই পরিকল্পনা করছে। তারাও আমাদের ভাই-বোন। বাংলাতেও পরিকল্পনা করছে। আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করব। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও আমরা ছাড়ব না। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, বিনা বিচারে কাউকে এ ভাবে জেলে রেখে দেওয়া যায় কি? মমতা বলেন, ‘হোয়াট ইজ় দিস? এ তো মোর দ্যান ইমার্জেন্সি।’ মমতা জানান, তাঁদের কাছে যা খবর, হাজারখানেক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউ লকআপে, কারও ঠাঁই হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। বাংলাদেশেও বহু মানুষকে ‘পুশব্যাক’ করা হয়েছে বলে সরব হন তৃণমূল সুপ্রিমো। হুঁশিয়ারির সুরে মমতা বলেন, ‘বাংলাকে বিরক্ত করলে আমি গোটা দেশে ঘুরব। আমাকে আটকাতে পারবেন না। দেখব কত ডিটেনশন ক্যাম্প আছে। ওখানে গিয়ে বাংলাতেই কথা বলব। সবার মাতৃভাষাকে সম্মান করতে হবে। বাংলাকে অসম্মান করলে চলবে না।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যে বাংলা স্বাধীনতার জন্ম দেয়, যে বাংলা নবজাগরণের জন্ম দেয়, যে বাংলা রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুলের জন্ম দেয়, আজ সেই বাঙালির উপর অত্যাচার? এনআরসির নামে তাঁদের বাদ দেওয়া? ভোটের এক বছর আগে নোটিফিকেশন দিয়ে বলছে, যাঁকে সন্দেহ হবে বাংলা ভাষায় কথা বলে, জেলে এক মাস রেখে দিতে পারো। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই নোটিস পাঠিয়েছে। এরা ইন্দিরা গান্ধিকে গালাগালি দিয়ে সুপার ইমার্জেন্সি ডে পালন করে। যা হচ্ছে, এটা তো মোর দ্যান ইমার্জেন্সি। বেআইনি আটক।’ ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে বিজেপির উদ্দেশ্যে মমতার হুঁশিয়ারি, “কে কী খাবে আপনি ঠিক করবেন? যা ইচ্ছা বলে যাচ্ছে, যা ইচ্ছা করে যাচ্ছে। লজ্জা নেই। কে শিঙাড়া খাবে, সামোশা খাবে, জিলিপি খাবে, পোহা খাবে, হালুয়া খাবে, অমৃতি খাবে আপনি ঠিক করবেন? নাক গলানোর মাস্টার, ওস্তাদ হয়ে গিয়েছে। বড় নেতার চেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছে ছোট নেতাগুলো। যা ইচ্ছা বলে যাচ্ছে, যা ইচ্ছা করে যাচ্ছে।’

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement