‘শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক’ প্রভুর আগমনেজগন্নাথের রথে সুখোই-৩০-এর চাকা বিশ্বশান্তি প্রতীক

IMG-20250624-WA0088

জগন্নাথ দেবের রথে সুখোই-৩০-এর চাকা বিশ্বশান্তি প্রতীক, এমনটাই জানালেন কলকাতা ইস্কনের রাধারমন দাস। ইসকন কলকাতা-র বার্তা যুদ্ধবিমান সুখোই-৩০-এর চাকা নিয়ে এগিয়ে চলেছে জগন্নাথের রথ, বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনায় মগ্ন হবে কলকাতা। বিশ্ব আজ উত্তেজনায় ভরা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা যেন মাথার ওপর ভাসছে। এমন সময়ে কলকাতা এক অনন্য বার্তা নিয়ে প্রস্তুত – ‘শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক।’ ইসকন কলকাতা-র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ঐতিহাসিক ৫৪তম বার্ষিক রথযাত্রা, যা শুধু ধর্মীয় উৎসবই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী ঐক্যের এক ঐকান্তিক আবাহন। গত বছরই কলকাতার রাস্তায় জগন্নাথের রথের সামনে এক বিরল দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, যুদ্ধরত রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসা ভক্তরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেচেছিলেন। বিশ্বের অধিপতি জগন্নাথ, যিনি সব সীমার উর্দ্ধে, তাঁর সামনে আমরা সবাই এক, এই শিক্ষাই যেন বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি।এই বছরের রথযাত্রায় যুক্ত হয়েছে আরও এক অনন্য দৃষ্টান্ত। গত চার দশক ধরে জগন্নাথের রথ চলেছে বিখ্যাত বোইং ৭4৭ বিমান-এর চাকার ওপর। সেই চাকা ১৯৭৭ সাল থেকে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে ব্যবহৃত হওয়ার পর এবার বদলে ফেলা হয়েছে ভারতের সামরিক শক্তির গর্ব, সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান-এর নতুন চাকা দিয়ে।যেসব চাকা আকাশে যুদ্ধের তীব্রতা সামলে নিতে পারে, সেগুলোই এবার কলকাতার বুকে জগন্নাথের রথ টেনে নিয়ে চলবে, যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, পৃথিবী যতই যুদ্ধের জন্য প্রযুক্তি নিক, প্রকৃত শক্তি আসে ভগবানের প্রতি আত্মসমর্পণ ও শান্তির বাণী প্রচারের মাধ্যমেই। এক বিশ্ব-উৎসব, যার মূল কলকাতায়, আজ বিশ্বজুড়ে ১৫০ টিরও বেশি দেশে, ৪,০০০-এর বেশি স্থানে রথযাত্রা পালিত হচ্ছে, যা সম্ভব হয়েছে ইসকন-এর প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য, কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। তাঁর শৈশবে কলকাতার বড়বাজারে রথযাত্রা দেখেই জন্ম নিয়েছিল এই বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন। ১৯৬৭ সালের ৯ই জুলাই আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে প্রথম আন্তর্জাতিক রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর ইচ্ছা ছিল, বিশ্বের প্রতিটি শহরে জগন্নাথের রথ পরিভ্রমণ করুক, আর মানুষ একত্রিত হোক ভক্তি ও শান্তির বন্ধনে।
কলকাতার রথযাত্রা, যা পুরীর পরেই সবচেয়ে বড়, প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষকে আকৃষ্ট করে, এবং গোটা শহর রঙ্গীন হয়ে ওঠে ভক্তি, আনন্দ আর উৎসবের রঙে।আগামি শুক্রবার, ২৭শে জুন দুপুর ১টা থেকে শুরু ইসকনের রথ যাত্রা, ৩সি, আলবার্ট রোড, রুট: হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট থেকে এ.জে.সি. বোস রোড হয়ে শরৎ বোস রোড হয়ে হাজরা রোড হয়ে এস.পি.এম. রোড হয়ে এ.টি.এম. রোড হয়ে চৌরঙ্গী রোড হয়ে এক্সাইড ক্রসিং হয়ে জে.এল. নেহরু রোড হয়ে আউটরাম রোড হয়ে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড।উল্টোরথ আগামি শনিবার ৫ই জুলাই, ২০২৫ | দুপুর ১২টা থেকে শুরু শুরু আউটরাম রোড (পার্ক স্ট্রিট মেট্রোর কাছে) থেকে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড হয়ে আউটরাম রোড হয়ে জে.এল. নেহরু রোড হয়ে ডোরিনা ক্রসিং হয়ে এস.এন. ব্যানার্জি রোড হয়ে মৌলালী ক্রসিং হয়ে সি.আই.টি. রোড হয়ে সুহরাওয়ার্দি অ্যাভিনিউ হয়ে পার্ক সার্কাস ৭ পয়েন্ট ক্রসিং হয়ে শেক্সপিয়র সরণি হয়ে হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট হয়ে ইসকন মন্দির। এবার রথের বিশেষত্ব ‘যেখানে ঐতিহ্য মিশেছে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে’ ভগবান জগন্নাথের রথ: উচ্চতা ৩৮ ফুট, ভাঁজ করা যায় এমন ছাউনি, যা কলকাতার জটিল রাস্তার জন্য উপযোগী। এবার এতে সংযোজিত হয়েছে সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান-এর চাকা, যা বদলে দিল ঐতিহাসিক বোয়িং ৭৪৭-এর চাকা, যা ১৯৭৭ সাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। সুভদ্রা দেবীর রথ: তিনটির মধ্যে সবচেয়ে ছোট, ভাঁজ করা যায় এমন ডিজাইন ও মজবুত লোহার চাকা।. বলরাম জিউ-এর রথ: দৃঢ় ও মজবুত, উচ্চতা ৩৬ ফুট, চারটি সাড়ে ছয় ফুটের লোহার চাকা।রথের সামনে দক্ষ দক্ষিণ ভারতীয় শিল্পীরা তৈরি করবেন মনোমুগ্ধকর রঙ্গোলী বা রাস্তার আলপনা, প্রাকৃতিক রঙের আবীর ব্যবহার করে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংকীর্তন শিল্পীরা, ডজন খানেক মৃদঙ্গ ও করতালের সঙ্গে, গর্জন তুলবেন কীর্তনের। শিশুদের ঝাঁকি, প্রসাদ বিতরণ বাস, আর লক্ষ লক্ষ ভক্তের আনন্দঘন উপস্থিতিতে কলকাতা রূপ নেবে এক বিশাল আধ্যাত্মিক মেলার।
ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মহামেলা শুরু ২৮শে জুন – ৪ঠা জুলাই। ২৮শে জুন থেকে ৪ঠা জুলাই পর্যন্ত পার্ক স্ট্রিট মেট্রোর বিপরীতে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে অবস্থান করবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। চলবে বর্ণময় মেলা। প্রতিদিন বিকেল ৩:৩০ থেকে রাত ৮:৩০ পর্যন্ত পরিবেশন করা হবে খিচুড়ি প্রসাদ। সন্ধ্যায় হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডোনা গাঙ্গুলীর নৃত্যদল ও পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের বিভিন্ন পরিবেশনা। থাকছে নাটক, কীর্তন ও আধ্যাত্মিক আলোচনা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উৎসবে যোগ দেবেন ৩রা জুলাই , ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে জগন্নাথদেবের দর্শন করবেন ও আরতি করবেন। তাঁর সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রার্থনা করবেন বাংলার, ভারতের ও সমগ্র বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণের জন্য। উৎসব, প্রার্থনা, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক – বিশ্ব যখন উত্তপ্ত, ইসকন কলকাতা সবার প্রতি আহ্বান জানায়- জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আসুন, আমরা সকলে মিলে ভগবানের রথ টানি, আনন্দ উপভোগ করি, আর একসঙ্গে বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনা করি। এই অস্থির সময়ে, ভগবান জগন্নাথের রথ চলুক সামনের দিকে, যুদ্ধবিমান চালিত চাকার শক্তিতে, বিশ্বাসের শক্তিতে, আর মানবতার গভীরতম আকাঙ্ক্ষায় শান্তি প্রতিষ্ঠার আশায়।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement