২১শে জুলাইয়ের সময় সংসদে অধিবেশনের দিন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। একদিকে যখন এই একুশের সমাবেশকে ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রস্তুতি তুঙ্গে, তখনই সংসদের এই সিদ্ধান্ত? রাজনৈতিক চাপানউতোরকে পাশে ঠেলে দলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার ভবানীপুরের দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ওই দিন তৃণমূলের কোনও সাংসদ সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবেন না। দলের সকল সাংসদ ওইদিন ধর্মতলার শহিদ সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২১শে জুলাইয়ের এই সমাবেশকে সর্ববৃহৎ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে শাসক শিবির। শনিবার দলের রাজ্য সভাপতির কার্যালয়ে দলের জেলা সংগঠনের সভাপতি এবং চেয়ারম্যানদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সেই বৈঠকেই তিনি ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশে সর্ববৃহৎ জমায়েত করার নির্দেশ দেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, সুব্রত বক্সী জেলা নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছেন যে, এই সমাবেশ শুধুমাত্র একটি বার্ষিক শ্রদ্ধার্ঘ্য নয়, বরং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য দলের শক্তি প্রদর্শনের এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। এই প্রেক্ষাপটেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অধিবেশন চললেও তাতে সাংসদদের অনুপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “২১শে জুলাই আমাদের কাছে এক আবেগের দিন, এক আত্মত্যাগের দিন। এই দিনে দলের প্রত্যেক স্তরের নেতা-কর্মী এবং সমর্থক ধর্মতলায় একত্রিত হন। আমাদের সাংসদরাও এর ব্যতিক্রম নন। দলের সকল লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের সেদিন ধর্মতলার সমাবেশে উপস্থিত থাকতে হবে।” সাধারণত, সংসদের অধিবেশন চলাকালীন দলের সাংসদদের উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক হলেও, ২১শে জুলাইয়ের গুরুত্ব বিচার করে এই বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দলের তরফে। এই সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশের গুরুত্ব তুলে ধরেই নেওয়া হয়েছে বলেও সূত্রের খবর। এই সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে যে, দলের কাছে এই সমাবেশ শুধুমাত্র একটি স্মারক অনুষ্ঠান নয়, বরং আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচির এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশকও। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তৃণমূল এই সমাবেশের মাধ্যমে তাদের জনভিত্তি এবং সাংগঠনিক শক্তি আবারও প্রমাণ করতে চাইছে। বিশেষত, যখন লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল এবং রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে, তখন এই বিশাল জনসমাগম দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে এবং বিরোধীদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিতে সাহায্য করবে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল এখন থেকেই নিজেদের রণনীতি তৈরি করছে। ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশকে সেই প্রস্তুতিরই একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই সমাবেশ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল বার্তা এবং দলের আগামী দিনের কর্মসূচী ঘোষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এই সমাবেশে যে জনজোয়ার হবে, তা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের পক্ষে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।আর এর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া বার্তা যোগাবে বাড়তি অক্সিজেন।এখন দেখার একুশের মঞ্চ থেকে আসন্ন বিধানসভার জন্য মমতা ঠিক কি বার্তা দেন।