উত্তেজনা চরমে মধ্যপ্রাচ্যে। যত সময় গড়াচ্ছে ততই তীব্রতর হচ্ছে ইজরায়েল ও ইরানের সংঘাত। লাগাতার আক্রমণ জারি রেখেছে ইজরায়েল। প্রত্যাঘাত করছে ইরানও। জেরুসালেম এবং তেল আভিভ লক্ষ্য করে পর পর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইরান। পাল্টা ইজ়রায়েলও জবাব দিচ্ছে। শনিবার এবং রবিবারের মধ্যবর্তী রাতে দুই দেশের বিস্তীর্ণ অংশে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষিত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে প্রচুর। প্রাণহানিও হয়েছে। এই আবহে পরমাণু চুক্তি নিয়ে রবিবার ইরানের সঙ্গে আমেরিকার প্রতিনিধির যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, ইজ়রায়েলের হামলার পর ইরান তা বাতিল করে দিয়েছে। আর সংঘাত আরও তীব্র হচ্ছে। ইজ়রায়েল সরকার জানিয়েছে, ইরানের হানায় তাদের দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। আহত ৪০০ জন। তাঁদের মধ্যে ন’জন গুরুতর আহত। শুক্রবার রাত থেকে ইরান ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দাবি করেছে ইজ়রায়েল। ইরানের দাবি, শান্তির জন্যই পরমাণু প্রকল্প শুরু করেছে তারা। ইজ়রায়েল সেই দাবি মানতে রাজি হয়নি। তারা জানিয়েছে, ইরান যেখানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে ফেরার উপায় নেই। তাই এই হামলা চালাচ্ছে তারা। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, আগামী দিনে হামলার ধার আরও বৃদ্ধি করা হবে। এত দিন যা হয়েছে, তার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।
শনিবার রাত থেকেই ইরানকে লক্ষ্য করে একের পর এক মিসাইল এবং ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়। ইরানের দাবি, এই ইজ়রায়েলি হামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬০ জনের। মৃতদের মধ্যে ২৯ জন শিশু। ইজ়রায়েলি ক্ষেপনাস্ত্র সেখানকার একটি বহুতলে আঘাত হানে। তাতেই এত জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, ইজ়রায়েল হামলা করার পরেই পাল্টা আক্রমণ করে ইরান। তাদের আক্রমণে ইজ়রায়েলে বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। ইজ়রায়েলের সঙ্গে সংঘাতে ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে ইয়েমেনও। সেখান থেকেও ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ শুরু হয়েছে ইজ়রায়েলে। অন্যদিকে আবার তেল আভিভ থেকে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথিদের লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের অন্যতম সহায়ক ইয়েমেনের হুথিরা। এই গোষ্ঠী বরাবর ইরান সমর্থিত। গাজ়ায় প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইজ়রায়েলের যুদ্ধেও হুথিরা হামাসের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে ইরানের সঙ্গে ইজ়রায়েলের যে সশস্ত্র সংঘাত চলছে, তাতে এই প্রথম অন্য কোনও দেশের সমর্থন পেল তেহরান। ইজ়রায়েলের সঙ্গে ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র সংঘাত পশ্চিম এশিয়ার উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিল। রবিবার হুথিদের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে সাম্প্রতিক সংঘাতে ইরানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইয়েইয়া সারেয়া জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মধ্য ইজ়রায়েলের জাফ্ফা শহরকে লক্ষ্য করে পর পর অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। শনিবার রাত এবং রবিবার ভোরের মধ্যে ইজ়রায়েল থেকেও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে ইয়েমেনের দিকে। ইজ়রায়েলি সংবাদমাধ্যমের দাবি, হামলার সময়ে হুথিদের চিফ অফ স্টাফ ঘামারি বৈঠক করছিলেন। তাঁর কমান্ড সদর দফতরেই ক্ষেপণাস্ত্র ফেলা হয়েছে। সেই এলাকায় রাস্তা আটকে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে হুথিদের। তবে কী হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। ঘামারি নিজে ইরানে প্রশিক্ষিত। ইরান এবং ইয়েমেনের হুথিদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষায় তাঁর ভূমিকাই সবচেয়ে বড়। পরমাণু চুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে ইরানের মতবিরোধের মাঝেই গত শুক্রবার তেহরানে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করে ইজ়রায়েল। তাতে মৃত্যু হয় ইরানের চার শীর্ষ সেনাকর্তা এবং ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানীর। এই হামলার পাল্টা দিতে শুরু করে ইরানও। তাদের মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলায় ইজ়রায়েলের দুই বড় শহর জেরুসালেম এবং তেল আভিভে সাইরেন বেজে চলেছে। নাগরিকদের আশ্রয়ে চলে যেতে বলছে প্রশাসন। ভেঙে পড়েছে একাধিক বাড়িও।