বাড়ি সংস্কার করতে গিয়ে সমস্যায় দম্পতি। বাড়ি সংস্কার করতে গেলে তৃণমূল নেতাকে দিতে হবে ৩০ হাজার টাকা। তবেই করা যাবে এই সংস্কার। এমনটাই অভিযোগ জোড়াসাঁকো বিধানসভা এলাকার বলরাম দে স্ট্রিটের সীমা সিংয়ের। এরপর এই ঘটনায় গিরিশ পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই দম্পতি। থানায় যে অভিযোগ তাঁরা জানিয়েছেন তাতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সির এবং তাঁর অনুগামীরা এসে বাড়ি মেরামত করতে বাধা দেয় এবং ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। এরপর বিষয়টি এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর রাজেশ সিনহাকে জানান সীমা সিং ও তাঁর কর্তা। এরপরই কাউন্সিলর কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে সঞ্জয় বক্সির বিরুদ্ধে য়ে অভিযোগ উঠেছে সে ব্যাপারে অবগত করেন। এদিকে এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সঞ্জয় বক্সি। পাল্টা হুমকি দিয়েছেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার।
এই সমগ্র ঘটনায় সীমা সিং জানান, বাড়িটি সংস্কার করছেন তিনি। এর মাঝে গত ৪ মে সঞ্জয় বক্সি ও সুশান্ত দত্ত তাঁর বাড়িতে গিয়ে ৩০ হাজার টাকা চান। সঙ্গে এ হুমকিও দেন, টাকা না দিলে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার। এরপরই সমগ্র বিষয়টি ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজেশ সিনহার নজরে আনা হয়। এরপরই কাউন্সিলর চিঠি লিখে সঞ্জয় বক্সি ও তাঁর স্ত্রী স্মিতা বক্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। সঞ্জয় বক্সি ও তাঁর স্ত্রী স্মিতা বক্সি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়মিত হয়রানি করেন বলে শাসক কাউন্সিলরের অভিযোগ।
এই প্রসঙ্গে কাউন্সিলর রাজেশ সিনহা জানান, সঞ্জয় বক্সির পরিবার এতদিন এই জোড়াসাঁকো অঞ্চলে ক্ষমতায় ছিলেন। গত সাড়ে তিন বছরে তিনি যা কাজ করেছেন, সেটা সঞ্জয় বা স্মিতা বক্সির করার কথা ছিল। সঙ্গে এও জানান, তিনি যথেষ্ট কাজ করেন এলাকার জন্য। আর সেই কারণে তাঁকে মানুষ ভালবাসেন। আর সেই কারণেই এই বক্সিরা সবসময় তাঁকে বিরক্ত করারও চেষ্টা করেন। এ ব্যাপারে শাসক দলকে তিনি জানিয়েওছেন। তবে এই প্রসঙ্গে কাউন্সিলর রাজেশ সিনহার প্রশ্ন, দল কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সেটা স্পষ্ট নয়।
এদিকে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সঞ্জয় বক্সি জানান, এসব ভিত্তিহীন কথা। তিনি ৩৭ বছর ধরে কলকাতা পৌরনিগমের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৮৫ থেকে ২ বার কাউন্সিলরও হয়েছেন। ১৯৯৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী স্মিতা বক্সি কাউন্সিলর ছিলেন। কাউন্সিলর থাকাকালীন কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। এরই রেশ টেনে সঞ্জয বক্সি এও জানান, ৩০ হাজার ঘুষ নিতে যাওয়ার ঘটনা অপ্রাসঙ্গিক। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সঙ্গে এও জানান, যে কাউন্সিলর চিঠি দিয়েছেন, তাঁর ভাই বিজেপি করেন। আর তা তিনি জানিয়েছেন দলের হাইকম্যান্ডকে। সঙ্গে ঘটনার তদন্তও চান তিনি।
এদিকে সঞ্জয় বক্সির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘কে কাকে দিয়ে করিয়েছে, কে কাকে দিয়ে বলিয়েছে, এই ধরনের অভিযোগের ভিত্তিহীন। কে কাকে দিয়ে কেন বলিয়েছে, খোঁজ নিলেই সবাই বুঝতে পারবে।’ সঙ্গে এও বলেন, যে কাউন্সিলর চিঠি দিয়েছেন, তাঁর ওয়ার্ডে রেকর্ড ভোটে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। এর প্রত্যুত্তরে কাউন্সিলর রাজেশ সিনহা জানান, সঞ্জয় বক্সিরা যখন ক্ষমতায় থাকাকালীনও এখানে বিজেপি এগিয়ে থাকত।