রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে তৃণমূলঃ মোদী

IMG-20250529-WA0495

আলিপুরদুয়ার: পরের বছরেই রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন।তার আগে বাংলায় পা রেখে কার্যত ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুর্নীতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নিশানা করার পাশাপাশি বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেডকে ভোট-প্রস্তুতির পরামর্শও দিলেন প্রধানমন্ত্রী।বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বার বার ‘নির্মম সরকার’ বলে আক্রমণ করেন তিনি।পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কর্মীদের কার্যত ভোটের ময়দানে নেমে পড়ার পরামর্শও দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘গণতন্ত্রের উপরে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কর্মীদের আমি কোমর বেঁধে প্রস্তুত হতে বলছি।’’ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এসএসসি মামলায় চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার জনের। যোগ্যরা চাকরি ফেরানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটেই আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে কড়া ভাষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নিশানা করেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাজ্যের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে তৃণমূল।” তাঁর কথায়, , “ভ্রষ্টাচারের সবথেকে খারাপ প্রভাব পড়ে যুব সম্প্রদায়ের উপর। গরিব এবং মধ্যবিত্তরা এর ফল ভোগ করে। কীভাবে চারদিক থেকে বরবাদ করে দেওয়া যায়, সেটা আমরা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিতে দেখেছি। তৃণমূল সরকার শাসনকালে হাজার হাজার শিক্ষকের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। ওঁদের পরিবার, সন্তানদের শেষ করে দিয়েছে। তৃণমূল বাংলার ছেলেমেয়েদের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এটা শুধু কয়েক হাজার শিক্ষকের জীবন নিয়ে খেলার বিষয় নয়, রাজ্যের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে শেষ করে দিচ্ছে। শিক্ষকদের উপর লক্ষ লক্ষ শিশু নির্ভরশীল। তৃণমূলের নেতারা এত বড় পাপ করেছে। এখনও নিজেদের অন্যান্য স্বীকার করছে না। উল্টে আদালতকে দোষী বলছে।” মুর্শিদাবাদ, মালদায় দাঙ্গা নিয়ে রিপোর্টে একাধিক বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছিল। এমনকী, মুর্শিদাবাদের অশান্তির সঙ্গে পহেলগাঁওয়ে গণহত্যার তুলনা টেনেছিল বিজেপিও। দু’ জায়গাতেই হিন্দুদের বেছে বেছে মারা হয়েছে, এমন দাবি করেছিল পদ্ম শিবির। সেই কথাও এদিন শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীর গলায়। তিনি বলেন, ‘মুর্শিদাবাদ, মালদায় যা হয়েছে, তা এই সরকারের নির্মমতা প্রকাশ পেয়েছে। দাঙ্গায় মা-বোনেদের সারাজীবনের পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। গুন্ডাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, লোকেদের ঘর বেছে বেছে পোড়ানো হয়েছে। এভাবে সরকার চলে নাকি? বাংলায় অত্যাচার হচ্ছে, কিন্তু সরকারের কোনও হেলদোল নেই। আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। বাংলা বলছে, নির্মম সরকার চাই না’। মোদী বলেন, তোষণ, দাঙ্গা, মহিলাদের ওপর অত্যাচার, শোষণের রাজনীতি বন্ধ হোক। বাংলায় প্রতিটি পরিবারকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিচ্ছি’।
বৃহস্পতিবার সকালে খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার বাগডোগরা থেকে সিকিমের উদ্দেশে রওনা হতে পারেনি। বাগডোগরা থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে সিকিমের কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। তার পরে আলিপুরদুয়ারে রওনা হয়ে হন। নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দুয়েক আগেই প্রধানমন্ত্রী পৌঁছে গিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে। ফলে তাঁর দুই কর্মসূচিই নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুটা আগে শুরু হয়। প্রথমে প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার জন্য পাইপলাইনে রান্নার গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মোদী। তার পরে পৌঁছোন ‘পরিবর্তন সঙ্কল্প সভা’র মঞ্চে। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত ভাষণ দেন মোদীর আগে। তারপরেই নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভাষণ শুরু করেন। আর শুরু থেকেই তাঁর নিশানায় ছিল তৃণমূল। যে সমস্ত সঙ্কটের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে তার উল্লেখ করে মোদী বলেন, এই মহূর্তে নানা সঙ্কটের ঘেরাটোপে রয়েছে বাংলা। প্রথম সঙ্কট, সমাজে ছড়িয়ে পড়া হিংসা এবং অরাজকতা। দ্বিতীয় সঙ্কট, মা-বোনেদের নিরাপত্তার অভাব, তাঁদের উপরে অত্যাচার। তৃতীয় সঙ্কট, যুবকদের মধ্যে ঘোর নিরাশা, বেকারত্বের যন্ত্রণা। চতুর্থ সঙ্কট, ঘনঘোর দুর্নীতি এবং তার ফলে এখানকার প্রশাসনের উপরে জনতার বিশ্বাস একনাগাড়ে কমতে থাকা। পঞ্চম সঙ্কট, গরিবের অধিকার ছিনিয়ে নিতে থাকা ক্ষমতাসীন স্বার্থপর রাজনৈতিক দল।’ দুর্নীতির কথা বলতে গিয়ে চা বাগান শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে অনিয়মের অভিযোগও তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘পিএফ নিয়ে যা হয়েছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। গরিবের মেহনতের কামাইয়ের উপরে ডাকাতি করা হচ্ছে। তৃণমূলের সরকার দোষীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।’’ তৃণমূল সরকারের ভুল নীতির কারণে একের পর এক চা বাগান বন্ধ হচ্ছে এবং শ্রমিকেরা কাজ হারাচ্ছেন বলেও অভিযোগ মোদীর। এদিন মোদী বলেন, ‘বিকশিত ভারত গড়ে তুলতে হলে, বাংলারও উন্নয়ন প্রয়োজন। বাংলাকেও নতুন উৎসাহের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাকে ফের অতীত ভূমিকায় ফির আসতে হবে। বাংলা মেক ইন ইন্ডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বাংলা নিজের ঐতিহ্য বজায় রেখে দ্রুত এগিয়ে যাক। বাংলার উন্নয়নের জন্য হাজার কোটি বিনিয়োগ করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের উদ্যোগেই কল্যাণী এইমস তৈরি হয়েছে। নিউ আলিপুরদুয়ার, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফ্রেট করিডর তৈরি করা হচ্ছে, কলকাতা মেট্রোর উন্নতি করা হয়েছে। বাংলার উন্নয়নেই বিকশিত ভারতের জয়। বাংলার ভবিষ্যত ঠিক করবে যুবরাই।’

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement