সন্ত্রাসীদের মদতদাতা পাকিস্তান: রাশিয়া-জাপানে সোচ্চার ভারতীয় দূতের

IMG-20250524-WA0241

রাশিয়া/নয়াদিল্লি: সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাক দ্বিচারিতা গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ৭টি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল তৈরি করেছে কেন্দ্র। বিশ্বের মোট ৩৩টি দেশে যাবে এই প্রতিনিধি দলগুলি। ইতিমধ্যেই রাশিয়া, জাপানে পৌঁছে গিয়েছেন দিল্লির দূতেরা। আর সেখানে তাঁরা সোচ্চার হলেন পাকিস্তানের কুৎসিত চক্রান্ত নিয়ে। মস্কোতে ডিএমকে সাংসদ কানিমোজিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ”একটা ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে যে, পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশ। বারবার এই কথা বলে চলেছে তারা। আমরা পরিষ্কার করে দিতে চাই আসল সত্যিটা। সেই সঙ্গেই আমরা জানাতে চাই, ভারতকে পরমাণু হামলার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করা যাবে না। আমরা আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য লড়ব। আর একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব। ভারত শান্তির পক্ষে।” অন্যদিকে টোকিওয় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “ভারত কখনও মাথানত করবে না, আমরা এখানে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে এসেছি। আমরা মোটেও ভীত নই। আমি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা। পাকিস্তানকে যে ভাষায় বোঝে সেই ভাষাতেই শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। যদি সন্ত্রাস পাগলা কুকুর হয়, তবে পাকিস্তান তাকে লালন পালন করছে। বিশ্বে সকলকে একজোট হয়ে ওই লালন পালনকারীকে প্রতিরোধ করতে হবে। নইলে ওই লালন পালনকারী আরও পাগলা কুকুরের জন্ম দেবে। ভারত দায়বদ্ধ তাকে শিক্ষা দিতে।” এদিকে কাতার, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইথিওপিয়া ও ইজিপ্টে যে প্রতিনিধি দল যাচ্ছেন, সেই দলে রয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি। রওনা হওয়ার আগে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ”গত ৪৫ বছরে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত জুগিয়ে চলেছে। আমরা বিভিন্ন দেশে যাব এবং পাকিস্তান যেভাবে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দেয়, তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় এবং সীমান্তে পাঠায় সন্ত্রাস ছড়াতে সেই চক্রান্ত ফাঁস করে দেব।” আসলে পহেলগাঁও সন্ত্রাস এবং অপারেশন সিঁদুরের পর ভারতের অবস্থান এবং পাকিস্তান কীভাবে প্রত্যক্ষে জঙ্গিদের মদত দিচ্ছে, সেটা গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চায় ভারত। আগামী দিনে পাকিস্তানের উপর নিষেধাজ্ঞা-সহ একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপে বন্ধু প্রয়োজন নয়াদিল্লির। সেজন্যই বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের আসল রূপ তুলে ধরার এই প্রচেষ্টা। অন্যদিকে ফের একবার রাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিল ভারত। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করেছে দিল্লি। যা নিয়ে ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামাবাদ। বারবার দাবি করছে, ভারত নাকি এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাক সরকারের এই মিথ্যাচার ধুয়ে দিল ভারত। পাক সন্ত্রাসের বলি নিরীহ ভারতীয়রা। যার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত। দিল্লি নয় ইসলামাবাদই এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। স্পষ্ট জানালেন ভারতের প্রতিনিধি। অতীতে বহুবার কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারতকে বিঁধতে চেয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু কোনওবারই হালে পানি পায়নি তারা। শুক্রবার রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে দিল্লিকে তোপ দাগতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রতিনিধি। কিন্তু সমস্ত মিথ্যাচার টেনে ছিঁড়ে দিয়ে রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থানী প্রতিনিধি পার্বথানেনী হরিশ বলেন, “পাকিস্তানের উপর আস্থা রেখে, বিশ্বাস করে ৬৫ বছর আগে ভারত এই চুক্তি করেছিল। যার প্রস্তাবনায় বলা করা হয়েছিল, চুক্তিটি সদিচ্ছা ও বন্ধুত্বের উপর ভিত্তি করে সম্পাদিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানে সেই বিশ্বাস, বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখেনি। প্রায় সাড়ে ছয় দশক ধরে পাকিস্তান এই চুক্তির অবমাননা করেছে। ভারতের বুকে ৩টি যুদ্ধ ও হাজার হাজার জঙ্গি হামলা চালিয়েছে পাক সন্ত্রাসীরা। গত চার দশক ধরে ২০ হাজারের উপর নিরীহ ভারতীয় এই সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলা পাকিস্তানের নৃশংসতার প্রমাণ।” পহেলগাঁও হামলা, অপরেশন সিঁদুর নিয়ে পাকিস্তান যে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে সেনিয়ে এদিন হরিশ বলেন, পাকিস্তানের প্রতিনিধি অপপ্রচার করছেন। ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের মদত দেয় তারা। যার জবাব দেওয়া হয়েছে অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে। কিন্তু সেই সময়ও ভারত যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দিয়েছে। কোনও পাক নাগরিককে টার্গেট করা হয়নি। কিন্তু পাকিস্তান তা করেনি। ওরা আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামে হামলা চালিয়েছে। এই সন্ত্রাসবাদ দমন না করলে গোটা বিশ্ব এর ফল ভুগবে। প্রসঙ্গত, সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল না করার আর্জি নিয়ে সম্প্রতি ভারত সরকারকে চিঠি লিখেছে ইসলামাবাদ। তাদের দাবি, এই চুক্তি বাতিলের ফলে অভূতপূর্ব সংকটের পরিস্থিতি পাকিস্তানে। কোথাও জলকষ্ট, কোথাও বন্যা পরিস্থিতি। দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় দেশবাসীর শুকিয়ে মরার অবস্থা। এই সংকট থেকে বাঁচতে ভারতের কাছে কাকুতি-মিনতি করছে পাকিস্তান। তবে পড়শি দেশের হাজার অনুরোধেও চিড়ে ভিজবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। কয়েকদিন আগেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “সিন্ধু জলচুক্তি আপাতত স্থগিত। যতদিন না সীমান্ত-সন্ত্রাস বন্ধ করবে পাকিস্তান, ততদিন এই চুক্তি বাতিল থাকবে।” গত ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গিঘাঁটিতে আঘাত হেনেছিল অপরেশন সিঁদুর। নিকেশ হয় শতাধিক জঙ্গি। পরে পাকিস্তানের অনুরোধে সংঘর্ষবিরতিতেও সায় দেয় দিল্লি। কিন্তু সংঘর্ষবিরতিতে সায় দিলেও সিন্ধু জলচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement