উদ্বাস্তু সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ‘ভারত ধর্মশালা নয়’

IMG-20250519-WA0276

উদ্বাস্তু সংক্রান্ত এক মামলায় বড়সড় পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। ভারত কোনও ধর্মশালা নয়। গোটা বিশ্বের উদ্বাস্তুদের এখানে আশ্রয় দেওয়া যায় না। সোমবার এমনটাই জানিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। শ্রীলঙ্কার তামিল নাগরিককে আটক করার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা হয়েছিল। ওই মামলা খারিজ করার সময় এই পর্যবেক্ষণ করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ। সুপ্রমি কোর্ট জানিয়েছে, ‘ভারত কোনও ধর্মশালা নয়, যে বিশ্বের শরণার্থীরা এখানে আশ্রয় পেতে চলে আসবেন। আমাদের নিজেদের জনসংখ্যাই ১৪০ কোটি।’ দেশে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ও রোহিঙ্গা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে বিতর্কের মাঝেই শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে শ্রীলঙ্কার এক তামিল নাগরিককে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলায় ওই ব্যক্তিকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও সাজা শেষ হলে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল মাদ্রাজ হাই কোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন শ্রীলঙ্কার ওই ব্যক্তি। আদালতে তাঁর আইনজীবী জানান, শ্রীলঙ্কার ওই নাগরিক ভিসা নিয়েই ভারতে এসেছিলেন। নিজভূমে ফেরত পাঠানো হলে ওনার প্রাণ সংশয় রয়েছে। তাছাড়া কোনওরকম ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া ছাড়াই ৩ বছর ধরে হেফাজতে রাখা হয়েছে। ব্যক্তির স্ত্রী, সন্তান যেহেতু ভারতের বাসিন্দা তাই তাঁকে ভারতে থাকতে দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয় আদালতের কাছে।বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলাকালীন কড়া সুরে বিচারপতি দত্ত বলেন, “ভারত কি গোটা বিশ্বের উদ্বাস্তুদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে? আমাদের দেশেরই জনসংখ্যা ১৪০ কোটির বেশি। আমাদের দেশ তো কোনও ধর্মশালা নয়, যে গোটা বিশ্বের শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে হবে।” পাশাপাশি বিচারপতি বলেন, “কেউ এখানে আসবেন এবং থেকে যাবেন এটা চলতে পারে না।” শ্রীলঙ্কায় ওই ব্যক্তির প্রাণহানি প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, “সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যারা এ দেশের নাগরিক শুধুমাত্র তাঁদেরই ভারতে স্থায়ী ভাবে বসবাসের মৌলিক অধিকার রয়েছে। তেমন হলে অন্য কোনও দেশে আশ্রয় নিতে পারেন। ”উল্লেখ্য, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এলটিটিই-এর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার ওই তামিল নাগরিককে। এর পর বছর পর নিম্ন আদালত অভিযুক্তকে ১০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন জানান তিনি। হাই কোর্ট সাজা কমিয়ে ৩ বছর করলেও সাজা শেষের পর দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও স্বস্তি পেলেন না ওই বিদেশি নাগরিক। প্রসঙ্গত, এর আগে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী সংক্রান্ত এক মামলাতেও কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। মামলাকারীর প্রাণের ঝুঁকি সংক্রান্ত আর্জিও টেকেনি আদালত। ওই ব্যক্তি নিজের দেশে ফিরে গেলে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা শুনে বিচারপতি দত্ত বলেন, “তা হলে অন্য কোনও দেশে যান!” সম্প্রতি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ভারত থেকে বিতাড়ন ঠেকাতে একটি মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। ওই মামলাটিতেও কোনও হস্তক্ষেপ করতে চায়নি শীর্ষ আদালত।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement