দেশের সুরক্ষায় ভারত যে কোনওরকম আপোস করতে রাজি নয়, সেকথা আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে তাঁর হুঙ্কার, পাকিস্তান হামলা চালালে আরও কড়া জবাব দেওয়া হবে। কয়েকদিনের সংঘাতের আবহে শনিবার সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে ভারত ও পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির জন্য একাধিক দেশ মধ্যস্থতা করেছে বলে জানানো হয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যমে। যার মধ্যে অন্যতম আমেরিকা। এর মাঝেই সংঘর্ষবিরতি নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা হয়েছে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের। নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ভান্সকে মোদী কথোপকথনের মাঝে বলেছেন, ‘পাকিস্তান যদি আবার আক্রমণ করে, ভারত আরও কড়া জবাব দেবে।’ মোদী তাঁকে এও বলেছেন, ‘ওরা গুলি চালালে, আমরা গোলা ছুড়ব’।সূত্রের খবর, মোদী ভান্সকে জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তান বেয়াদপি করলে রেয়াত করবে না ভারত। পালটা জোরাল জবাব দেওয়া হবে।পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি হলেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই থামাবে না ভারত। সেই কাজ আগের মতোই চলবে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জেডি ভান্সকে মোদী এটাও বলেছেন, ‘দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হলে শুধুমাত্র পিওকে নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া আমাদের মধ্যে আর কোনও বিষয়ে আলোচচনার অবকাশ নেই। যদি পাকিস্তান সন্ত্রাস দমন নিয়ে আলোচনা করে তা হলে আমি রাজি।’প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ভ্যান্সের বৈঠকের পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। উল্লেখ্য, পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল জঙ্গি হামলার সময়ে ভারতেই ছিলেন সস্ত্রীক জেডি ভান্স। এই জঙ্গি হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দাও করেন তিনি। পহেলগাম হামলার পর এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ রয়েছে বলে একাধিক প্রমাণ দেওয়া হয়েছে ভারতের তরফে। এর পরেই পাকিস্তানের নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘অপারেশন সিন্দুরে’র মাধ্যমে হামলা চালায় ভারতীয় সেনা। তারপরেই সংঘাত তীব্রতর হয়। এই প্রেক্ষাপটেই আবার শনিবার সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে ভারত ও পাকিস্তান। আজ সোমবার আরও এক দফায় ভারত ও পাকিস্তানের ডিজিএমও’র মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা যুদ্ধবিরতি নিয়ে।তার আ্গে রবিবার জরুরি বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদী।সেই বৈঠকে সেনাকর্তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এদিকে ডিজিএমও পর্যায়ে বৈঠকের আগে রবিবার ফের কাশ্মীর প্রসঙ্গকে হাতিয়ার করার চেষ্টা শুরু করেছে ইসলামাবাদ। সংবাদ সংস্থার খবর অনুসারে, পাক বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, “জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্যার যে কোনও ন্যায্য এবং স্থায়ী নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই কাশ্মীরি জনতার নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারকে নিশ্চিত করতে হবে।” বস্তুত, ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে রবিবার ফের সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনিও কাশ্মীর সমস্যা মেটাতে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পরই পাক বিদেশ মন্ত্রকও কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাল। কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করে ট্রাম্পের বিবৃতিকেও স্বাগত জানিয়েছে ইসলামাবাদ। শান্তি ফেরানোর জন্য মার্কিন প্রশাসনের যে কোনও উদ্যোগকে তারা সমর্থন করবে বলে জানিয়েছে। সোমবার ভারত-পাক আলোচনাতেও কাশ্মীর সমস্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরতে পারে পাকিস্তান। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ জানিয়েছেন, মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা। সেখানে সিন্ধু জলচুক্তি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রসঙ্গের পাশাপাশি কাশ্মীর সমস্যা নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর।