যত সময় গড়াচ্ছে ততই পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়াতে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ভারত। এবার পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য কার্যত বন্ধ করে দিল নয়াদিল্লি। সব ধরণের পাকিস্তানি পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত। বাণিজ্য মন্ত্রক থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ কথা জানানো হয়েছে। কোনও ভাবেই এ দেশে প্রবেশ করতে পারবে না পাকিস্তানি পণ্য। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে তৈরি কোনও পণ্য সরাসরি বা ঘুরপথে আমদানি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা এবং সরকারি নীতির স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না-হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এই নির্দেশিকার কোনও ব্যতিক্রমের জন্য অবশ্যই ভারত সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হবে। উল্লেখ্য, কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর কড়া অবস্থান নেয় ভারত। আগেই জলচুক্তি বাতিল থেকে শুরু করে সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা বাতিল-সহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত। এবার পাকিস্তানি পণ্যের আমাদানিও নিষিদ্ধ করল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে হওয়া জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় ২৬ জনের। এই হামলার পিছনে পাকিস্তানের মদতের যোগসূত্র মিলেছে। হামলাকারীদের মধ্যে দু’জন পাকিস্তানি বলেও দাবি। হামলার নেপথ্যে হাফিজ সইদের জড়িত থাকার সম্ভাবনাই প্রবল। এমতাবস্থায় দুই দেশের সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগেই পাক সরকার ভারতের সঙ্গে সমস্তরকম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। তাতেও বিপাকে পড়েছে ইসলামাবাদই। এমনিতে পাকিস্তান একাধিক ক্ষেত্রে ভারতের পণ্যের উপর নির্ভরশীল। তবে বাণিজ্য বন্ধের জেরে পাক বাজারে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটার সংকট সবচেয়ে বেশি রয়েছে তা হল ওষুধ। ভারতের বাজার থেকে কাঁচামাল না গেলে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ যেতে পারে বহু পাকিস্তানির। সংকট বুঝে তড়িঘড়ি দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন পাক সরকারের আধিকারিকরা। এর মধ্যেই ভারতের তরফে এই ঘোষণায় আরও বিপদ বাড়ল পাকিস্তানের। বাণিজ্য মহলের মতে, পাকিস্তান থেকে সরাসরি খুব বেশি পণ্য ভারতে আসে না। তবে ঘুরপথে দুবাই হয়ে কিছু পণ্য ভারতে আসত। বিশেষত, পোশাক, মশলা বা ছোট যন্ত্রাংশের মতো কিছু পণ্য ঘুরপথে ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করত। তা-ও খুব বেশি নয়। বাণিজ্যমহলের কারও কারও মতে, ঘুরপথেও যাতে কোনও পাকিস্তানি পণ্য ভারতে প্রবেশ না করে, তা নিশ্চিত করতেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় জঙ্গিহানার পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করেছিল। ওই সময়ে ফল, সিমেন্ট, পেট্রোপণ্য, আকরিক-সহ পাকিস্তান থেকে আসা বেশ কিছু পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছিল ভারত। বাণিজ্যিক ভাবে ভারতের অন্যতম পছন্দের দেশ (মোস্ট ফেভার্ড নেশন)-এর তালিকা থেকেও পাকিস্তানকে সরিয়ে দিয়েছিল ভারত। তার পর থেকে গত কয়েক বছরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকেছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে পাকিস্তান থেকে মাত্র ৪ লক্ষ ২০ হাজার ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল ভারত। এক বছর আগেও যে পরিসংখ্যান ছিল, তার থেকে ২০ লক্ষ ডলারেরও কম মূল্যের আমদানি হয়েছিল ওই সময়ে। পাকিস্তানি পণ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজের উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ শিপিং’-এর তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের পতাকা থাকা কোনও জাহাজ ভারতীয় বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না। একই রকম ভাবে কোনও ভারতীয় জাহাজও পাকিস্তানের কোনও বন্দরে যাবে না। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরে বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি বৈঠকে বসেছিল। ওই বৈঠকের পর পরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কূটনৈতিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। তার মধ্যে অন্যতম অটারী সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। বস্তুত, অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দু’দেশের মধ্যে অন্যতম বাণিজ্যপথ ছিল। তার পরের দিন পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপ করে। ওই সময়ে ইসলামাবাদ জানিয়েছিল, তারা ভারতের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তৃতীয় কোনও দেশ হয়েও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হবে না বলে জানিয়েছিল পাকিস্তান।