সৈকতনগরী ‘জগন্নাথধামে’ মাহেন্দ্রক্ষণে উদ্বোধন জগন্নাথ মন্দিরের

IMG-20250429-WA0281

আর কয়েক ঘন্টা পর শুরু হবে মহেন্দ্রক্ষন। অক্ষয় তৃতীয়ার পূর্ণ মাহেন্দ্রক্ষণে উদ্বোধন হবে শ্রীক্ষেত্র দীঘার জগন্নাথ মন্দির। শতাধিক পুরোহিতের উপস্থিতিতে মহাযজ্ঞের পর উদ্বোধন হবে শ্রীধাম দীঘার জগন্নাথ মন্দির। বিরোধীরা নানান প্রশ্ন তুলেছিলেন দীঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে কিন্তু কোন ভাবেই পিছুপা হয়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অদম্য প্রচেষ্টা এবং ইচ্ছাশক্তির বলে আজ উদ্বোধন হতে ছলেছে জগন্নাথ মন্দির। সৈকত নগরী আজ থেকে শ্রীক্ষেত্র জগন্নাথ ধামে পরিনত হতে চলেছে। গোটা দেশের পাশাপাশি বিশ্বের নজর থাকছে এই জগন্নাথ ধামের দিকে। দেশ-বিদেশে বহু পর্যটক ইতিমধ্যে জগন্নাথ ধাম দীঘায় এসে হাজির হয়েছেন। সৈকত নগরীর কোথাও তিল ধারনের স্থান নেই। প্রতিটি হোটেল হোমস্টে কানায় কানায় পূর্ণ। কয়েক লক্ষ মানুষ আজ এই উদ্বোধনের সাক্ষী থাকবেন। মঙ্গলবার মন্দিরের সর্বোচ্চ শিখরে স্থাপন করা হল পবিত্র ধ্বজা। এক বিশেষ ও আন্তরিক পরিবেশে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে সেই ধ্বজা গ্রহণ করেন সেবায়েতরা এবং মন্দিরের চূড়ায় স-সম্মানে তা উত্তোলন করেন। এই পুণ্য লগ্নে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং দুই হাত জোড় করে, শ্রদ্ধার সাথে ধ্বজা উত্তোলনের মনোরম দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করেন।তাঁর এই উপস্থিতি অনুষ্ঠানটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরও বৃদ্ধি করে তোলে। উল্লেখ্য, এই ধ্বজা উত্তোলন অনুষ্ঠানটি মন্দিরের উদ্বোধনের পূর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার। এটি মন্দিরের পবিত্রতা, শক্তি ও ঐশ্বর্যের প্রতীক। দিঘায় এই নতুন জগন্নাথ মন্দিরটি শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যই নয়, বরং পর্যটকদের জন্যও এক নতুন আকর্ষণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আগামীকাল মন্দিরের দ্বার ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বুধবার বিকেল চারটে মহাযজ্ঞের মাধ্যমে জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন এবং মন্দিরের দরজা সাধারণের জন্য খোলা হবে। ওটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে ২৮ এপ্রিল থেকে দীঘায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি অনুষ্ঠান যাতে সুন্দর ভাবে হয় সেদিকে নজর রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। এই অনুষ্ঠানের মাহেন্দ্রক্ষণে মহাযজ্ঞে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেই আহুতি দেবেন। অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার। মহাযজ্ঞে ব্যবহার করা হচ্ছে ১০০ কুইন্টাল আম ও বেল কাঠ এবং ২ কুইন্টাল ঘি। যজ্ঞকুণ্ডে কলস স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন তীর্থস্থান থেকে মঙ্গল কলসে আনা হয়েছে জল। মহাযজ্ঞের সমাপ্তির পর তিন দেবদেবীকে সুসজ্জিত খাটে ঘুম পাড়ানো হবে। ৩০ তারিখ তাঁদের ঘুম ভাঙিয়েই প্রাণপ্রতিষ্ঠা-স্নানপর্ব ও পুণ্যাভিষেক। ৫৬ ভোগ-প্রসাদ দেওয়া হবে প্রভু জগন্নাথকে। আলোকমালায় সেজে উঠেছে দিঘা । ভেসেছে জগন্নাথ মন্দির । চারদিকে বেজে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা, ইন্দ্রনীল সেনের গাওয়া জগন্নাথের গান – ‘তোমায় মোদের আস্থা, তোমায় মোদের বিশ্বাস, তোমায় ভালবাসা। পুণ্য করো, পুণ্য করো, পুণ্য করো। ধরায় এসো, ভালবাসো। জয় জগন্নাথ। জয় জগন্নাথ। জয় জগন্নাথ জয় হে।’কলকাতা থেকে দিঘা পর্যন্ত ১৮৫ কিলোমিটার পথে অসংখ্য তোরণ। সেখানে প্রভু জগন্নাথ ও মন্দিরের ছবি। উৎসাহীদের ভিড় লেগেই রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে যে ভিড় আরও বিপুল হারে বাড়বে, তা নিয়ে প্রশ্ন নেই। বাংলার বুকে এটি মেগা আন্তর্জাতিক ইভেন্ট। তার বিপুল আয়োজনেও কোনও ঘাটতি নেই। গোটা বিষয়টির তদারকিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক হয়েছে, বুধবার যাঁরা মন্দিরে যাবেন তাঁদের গরমে যাতে কষ্ট না হয়, তাই গামছা দেওয়া হবে। প্রথমে ১২ হাজার গামছার আয়োজন থাকলেও পরে ঠিক হয়, ২২ হাজার গামছা দেওয়া হবে। আসলে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন যাতে কোনও সাধারণ মানুষের কষ্ট না হয়। তাই অতিথি আপ্যায়ন থেকে গাড়ি পার্কিংয়ের খুঁটিনাটি – সবটাই তিনি খতিয়ে দেখেছেন।মন্দিরের আচার পালনে ইসকনের ৬০ জন যুক্ত রয়েছেন। আর মন্দিরের পুজোপালনে রাজেশ দ্বৈতাপতি-সহ ৩৫ জন রয়েছেন। পুরী থেকেও এসেছেন অনেকে। রাজেশ দ্বৈতাপতি ও ইসকনের রাধারমণ দাসকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মন্দির চত্বর ঘুরে দেখেন।মন্দিরের একপাশে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, আরেকপাশে ভিডিও দিয়ে দেখানো হবে। সামনের চাতালে রয়েছে ভক্তদের বসার আয়োজন। সেই সবই খুঁটিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ছাড়াও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুজিত বসু, পুলক রায়, স্নেহাশিস চক্রবর্তী। রয়েছেন হিডকোর ভাইস চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, ডিজিপি রাজীব কুমার ছাড়াও নিরাপত্তা বিষয়ক ডিজি। কার্যত শশব্যস্ত প্রশাসন। আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতিদের। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, কারও যেন কোনও সমস্যা না হয়। মন্দির সামনে চেয়ার ও কার্পেট বিছানো হচ্ছে। দিঘা পৌঁছে নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়, নচিকেতা, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়দের সঙ্গেও দেখা করেন। শিল্পপতিদের নির্দিষ্ট হোটেলে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। তাঁদের সমস্যা হচ্ছে কি না জেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী ডেকরেটার্স, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের লোকদের সঙ্গেও কথা বলেন। আগেরবার এসে দেখেছিলেন, চৈতন্যঘাট ঠিক নেই, এবার সেটাও দেখে নিলেন এবার।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement