৩ দশক ধরে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয়, দায় নিল পাকিস্তান

IMG-20250425-WA0197

জঙ্গি হামলার ঘটনায় যত বার ভারতের মাটি রক্তাক্ত হয়েছে, ততবারই পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের মাটিতেই যে ভারত বিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি লালিত-পালিত হচ্ছে, সেই অভিযোগ বহুদিন ধরেই জানিয়ে আসছে ভারত। এবার সেইকথা মেনে নিলেন খোদ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজা আসিফ।তাঁর স্বীকারোক্তি, গত তিন দশক ধরে জঙ্গিদের সমর্থন এবং প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইসলামাবাদ। তবে এর জন্য দায় আমেরিকা এবং পশ্চিমি বিশ্বের উপরও চাপিয়েছেন তিনি। জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরম আকার নিয়েছে। এহেন পরিস্থিতির মাঝেই এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের ইন্ধন স্বীকার করে নেন আসিফ। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ পশ্চিমি বিশ্বের জন্য আমরা গত তিন দশক ধরে এই নোংরা কাজ করে যাচ্ছি।” এই ‘ভুল’ কাজের জন্য পাকিস্তানকে ভুগতে হচ্ছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। আক্ষেপের সুরে আসিফ আরও বলেন, “যদি আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীতে ৯/১১-এর পরবর্তী যুদ্ধে যোগ না দিতাম, তাহলে পাকিস্তানের ইতিহাস অন্যরকম হত।”প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর দ্বিমেরুকৃত বিশ্বে আমেরিকা এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ শুরু হয়। মার্কিন অক্ষের সদস্য পাকিস্তান ঠান্ডা যুদ্ধে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এমনকি ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর মার্কিন সেনা যখন আফগানিস্তান কার্যত দখল করে, তখনও আমেরিকার পাশে দাঁড়ায় পাকিস্তান। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পাকিস্তানের মন্ত্রী দাবি করেন, আফগানিস্তানে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছিল আমেরিকা।পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে মুখ খুলে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতকেও দুষেছেন। তাঁর দাবি, ভারত পাকিস্তান এবং গোটা অঞ্চলে সমস্যা তৈরি করতে চাইছে। মঙ্গলবারের জঙ্গি হামলার নেপথ্যে লশকর-এ-ত্যায়বার হাত রয়েছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, “লশকর পুরনো একটা নাম। এটা এখন আর নেই। আমাদের সরকার এটার নিন্দা জানায়। পাকিস্তান কয়েক দশক ধরে সন্ত্রাসবাদের শিকার।” পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটককে নৃশংস হত্যার ঘটনায় নিন্দায় মুখর গোটা বিশ্ব। ইতিমধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে উঠে এসেছে পাক যোগের ইঙ্গিত। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানের লস্কর ই তইবার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা ‘টিআরএফ’। এ প্রসঙ্গে পাক মন্ত্রীর দাবি, “পাকিস্তান থেকে লস্কর ই তইবা শেষ হয়ে গিয়েছে। অতীতে লস্করের সঙ্গে পাকিস্তানের কিছু সম্পর্ক ছিল ঠিকই তবে বর্তমানে যে সংগঠন নেই তার ছায়া সংগঠন কথা থেকে আসছে। পাকিস্তানের সঙ্গে লস্করের যোগ খুঁজে পাওয়ার অর্থ এই নয় যে আমরা তাঁদের সাহায্য করব।”তবে পহেলগাঁও হামলায় পাকমন্ত্রী পাকস্তান সরাসরি যোগ অস্বীকার করলেও জানা যাচ্ছে, পিওকে ও পাকিস্তানের হ্যান্ডলারদের সহায়তায় নাশকতার এই ছক অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করা হয়েছিল। ওপার থেকে অস্ত্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের এদেশে পাঠানোর পাশাপাশি খোঁজা হয়েছিল এমন পর্যটনস্থল, যেখানে পর্যটকের সংখ্যা প্রচুর হলেও নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে তুলনামূলক কম। শুধু তাই নয়, আততায়ীদের কাছে ওপার থেকে রিয়াল টাইম নানা নির্দেশও পাঠানো হচ্ছিল বলেও শোনা যাচ্ছে। যে চার আততায়ী মঙ্গলবার নাশকতা চালিয়েছিল, তাদের হেলমেটে ক্যামেরা লাগানো ছিল। যার ফলে ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং ও রিয়াল টাইম আপডেটও নিচ্ছিল তাদের ‘আকা’-রা। এরা পুঞ্চেও এই ধরনের সন্ত্রাস করেছে বলে তথ্য সামনে আসছে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement