পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে ২৬ জন পর্যটকের। পহেলগাঁওয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে সেনাবাহিনী।বুধবার চার জঙ্গির ছবিও প্রকাশ করা হয় ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার তরফে। জঙ্গিদের খোঁজে ‘অপারেশন’ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা যাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ‘অপারেশন’ শুরু করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পহেলগাঁওয়ের ঘন জঙ্গল এবং পাহাড়ি এলাকায় লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খুঁজে বের করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অপারেশনে বিশেষ রেডার ব্যবহার করছে ইন্ডিয়ান আর্মি। এই রেডার ঘন জঙ্গলের ভিতরে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের গতিবিধি নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে পারে। এই মুহূর্তে পহেলগামের জঙ্গলে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, সিআরপিএফ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের যৌথ উদ্যোগে অপারেশন চলছে। দুপুরে জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় নির্বিচারে গুলি চালায় জঙ্গিরা। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল পাঁচ-ছয় জন। সকলের মুখে ছিল মাস্ক। হাতে একে ৪৭-এর মতো বন্দুক। আচমকাই পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। হামলায় যে কয়েকজন জঙ্গি গুলি চালিয়েছিল, তাদের রাফ পেন্সিল স্কেচও প্রকাশ করা হয়েছে। হামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম কয়েকজন পর্যটকের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই স্কেচ তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, হামলার সময় কয়েকজন জঙ্গির মুখ ঢাকা ছিল। আবার কয়েকজন জঙ্গির মুখ খোলা ছিল। যাদের মুখ খোলা ছিল, তাদের কেমন দেখতে তা পর্যটকদের থেকে বিস্তারিত জেনে ওই স্কেচ করা হয়। ওই স্কেচ পহেলগাম ও তার লাগোয়া এলাকা ছাড়াও জম্মু-কাশ্মীরে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এনআইয়ের পক্ষ থেকে। আসিফ ফৌজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালাহ নামে তিন জঙ্গির স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে কোন স্কেচ কার তা জানানো হয়নি। এখনও পর্যন্ত পহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও কয়েক জন। নিহতদের মধ্যে তিন জনের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। পহেলগাঁও হামলায় দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির আবহে জন্ম হয় এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর। পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই তিন জঙ্গিই টিআরএফের সদস্য। তবে হামলার মূল চক্রী সইফুল্লা খালিদ ওরফে সইফুল্লা কাসুরি। তিনি লশকরের অন্যতম প্রধান। এ ছাড়াও, এই জঙ্গিগোষ্ঠীর অন্যতম মাথা তথা ভরতের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা হাফিজ় সইদের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত সইফুল্লা। অন্য দিকে, জম্মু ও কাশ্মীর সরকার নিহতদের পরিবারপিছু ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি গুরুতর জখম ব্যক্তিদের দু’লক্ষ এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর আহতদের এক লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে আইইডি বিস্ফোরণের ছক করেছিল জঙ্গিরা। পরে পরিকল্পনা বদলে দু’টি দলে ভাগ হয়ে যায় তারা। অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালায়। জঙ্গিরা সকলেই সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিল বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। দিন কয়েক আগেই ভারতে আসে তারা। এমনকি এলাকা পরিদর্শনও করে যায়।