কখন যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হবে, এই প্রশ্ন নিয়েই সোমবার দিনভর এসএসসি ভবনের বাইরে অবস্থানে বসেছিলেন চাকরিহারা শিক্ষকরা।কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে যেতেই এসএসসি ভবনের সামনে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়।প্রথমে জানা গিয়েছিল, সন্ধ্যে ৬টার পর যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু বিকেল নাগাদ চাকরিহারাদের কয়েকজন এসএসসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে ভিতরে যান। বৈঠকের মাঝেই বাইরে হঠাৎ করে উত্তেজনা ছড়ায় যখন চাকরিহারাদের একটা অংশ ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ ব্যারিকেড করে আটকে দেয়। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয় এসএসসি ভবনের সামনে। সোমবার চাকরিহারা শিক্ষকরা এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। রাত থেকেই বিভিন্ন জেলার চাকরিহারারা শহরে আসতে শুরু করেছিলেন। সোমবার এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেন চাকরিহারারা। কর্মসূচি থেকেই তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন, যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ না করলে লাগাতার অবস্থান চালিয়ে যাবেন তারা। আর সন্ধ্যে নামতেই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। ভিতরে ঢুকতে গেলে শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি বেধে যায়।
২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আবারও পরীক্ষায় বসতে হবে এই প্যানেলের শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীদের। তবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে শিক্ষক, শিক্ষিকাদের। তারই মধ্যে শেষ করতে হবে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া। কিন্তু চাকরিহারাদের একটা বড় অংশের দাবি, তাঁরা নতুন করে পরীক্ষায় বসবেন না। বরং, এসএসসি যোগ্য-অযোগ্যর তালিকা প্রকাশ করুক। তাঁদের বক্তব্য, এসএসসি-কেই ‘টেন্টেড’ আর ‘আনটেন্টেড’ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ‘নট স্পেসিফিক্যালি টেন্টেড’ বললে চলবে না। এই সমস্ত দাবিকে সামনে রেখেই কমিশনের উপর চাপ বাড়াতে সোমবার এসএসসি অভিযান করেন চাকরিহারারা। এসএসসি নিয়োগ মামলায় ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি গিয়েছে। এঁদের মধ্যে অযোগ্যদের সঙ্গে অনেক যোগ্য প্রার্থীও আছেন। চাকরি ফেরানোর দাবিতে পথে নেমেছেন তাঁরা। এসএসসি মামলায় মূল জটিলতা তৈরি হয়েছে যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাই নিয়ে। উত্তরপত্রের তথ্য উদ্ধার করা যায়নি। তাই যোগ্য কারা এবং অযোগ্য কারা, আলাদা করা যায়নি। সেই কারণেই সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করতে হয়েছে। আদালতের নির্দেশের পর উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটের ‘মিরর ইমেজ’ প্রকাশ্যে আনার দাবি জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।
আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ্য চাকরিহারাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কারও চাকরি যাবে না। সুপ্রিম কোর্টে রায়ের ব্যাখ্যা চাইবে রাজ্য সরকার। সমাধানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। রিভিউ পিটিশনও দাখিল করা হবে। তার আগে আপাতত যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের স্বেচ্ছায় পরিষেবা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চাকরিহারারা অনেকেই এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি। সসম্মানে চাকরি এবং পদ ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এর মধ্যেই অবশ্য মধ্য শিক্ষা পর্ষদের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে গিয়ে পড়াতে পারবেন যোগ্য শিক্ষকরা। কিন্তু চাকরিহারাদের দাবি, তারা স্থায়ী সমাধান চান। আর সেই কারণেই তারা যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করার দাবিতে অনড়। এর আগে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক হয় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর। সেই বৈঠকে তালিকা প্রকাশের আশ্বাস দিয়েছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী। ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, যোগ্য-অযোগ্যর তালিকা প্রকাশ করতে কোনও আপত্তি নেই এসএসসির। সেই সময়েই শোনা গিয়েছিল, ২১ এপ্রিল অর্থাৎ সোমবার যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে পারে এসএসসি।কিন্তু রাত ৮টা পর্যন্ত কোনও তালিকা প্রকাশ করা হয়নি স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে।