অশান্ত এলাকায় নারী সুরক্ষা উদ্বিগ্ন মহিলা কমিশন

IMG-20250420-WA0315

সংশোধি ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে মুর্শিদাবাদের যে সমস্ত এলাকায় অশান্তি হয়েছে, সেইসব এলাকা ঘুরে দেখেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দল। হিংসা জর্জরিত মুর্শিদাবাদে নারীদের সুরক্ষার বিষয়ে চিন্তিত মহিলা কমিশন। তাঁদের মনোবল চাঙ্গা করতে অনেক কাজ করতে হবে। রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকার জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদের উপদ্রুত এলাকার মহিলারা ভীত-সন্ত্রস্ত। শনিবার মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জে গিয়েছিলেন কমিশনের সদস্যেরা। সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে এসে রবিবার কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের বাস্তব পরিস্থিতির রিপোর্ট দেওয়া হবে কেন্দ্রকে।’’ রবিবার নিউটাউনের একটি পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, “গত ২ দিন ধরে বাংলায় আছি। মালদহ, মুর্শিদাবাদে গিয়েছি। এখানকার হিংসার ঘটনায় অনেকে আক্রান্ত হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি খুবই কঠিন। মহিলা, শিশুদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি সেখানকার কঠিন পরিস্থিতির কথা ভুলতে পারছি না। কারও কারও বাড়িতে লুটপাট করা হয়েছে। ভয় দেখানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদের মহিলাদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে। ওরা ভীত সন্ত্রস্ত। ওদের মনোবল বাড়ানোর কাজ করতে হবে।” কেন্দ্রর কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি। শনিবার মহিলা কমিশনের সদস্যেরা জেলার হিংসাবিধ্বস্ত এলাকার মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাঁরা এলাকায় যেতেই স্থানীয় মহিলাদের একাংশ পুলিশ এবং রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁদের কেউ কেউ বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্মীর ভান্ডার চাই না, চাই নিরাপত্তা।’’ এলাকায় স্থায়ী বিএসএফের শিবির করারও দাবি তোলেন মহিলাদের একাংশ। রবিবার কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘মহিলারা বলছিলেন, বিএসএফের জন্যই ওঁরা বেঁচে রয়েছেন। আমরা যেখানেই গিয়েছি, মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেছি, ওঁদের রাগে কেঁপে উঠেছি আমরা। ওঁদের সব স্বপ্ন শেষ। ওঁরা সব হারিয়েছেন। ওঁরা শুধু একটাই কথা জিজ্ঞেস করছিলেন যে, ওঁদের কী দোষ? এক মহিলা কয়েক দিন আগেই এক সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। তাঁকে ঘর ছাড়তে হয়েছে!’’ প্রসঙ্গত, অশান্তির জেরে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জ এবং সুতির বহু বাসিন্দা এখনও ঘরছাড়া। গঙ্গা পেরিয়ে ও পারে মালদহে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁদের অনেককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু ঘরছাড়ারা সকলে এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি বলেই দাবি স্থানীয় সূত্রে।
মুর্শিদাবাদের উপদ্রুত এলাকায় মহিলা কমিশনের পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও গিয়েছিল। গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও, যা নিয়ে সুর চড়িয়েছে শাসকদল তৃণমূল। শনিবার সকালে মালদা থেকে মুর্শিদাবাদে যান রাজ্যপাল। তারপর সোজা পৌঁছে যান খুন হওয়া পরিবারে। ওই পরিবারের বাবা ও ছেলেকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যপালকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা রাজ্যপালকে বলেন, ‘ওরা বলেছে, এলাকায় থাকতে দেব না। ভয়ে রাতে ঘুমোতে পারছি না। এভাবে কতদিন চলবে জানি না।’ রাজ্যপাল আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘কোনও অসুবিধা হলে সরাসরি আমাকে ফোন করবেন।’ প্রসঙ্গত, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মুর্শিদাবাদে। একাধিক বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয়। এই আবহে প্রাণ হারান বাবা, ছেলে-সহ মোট তিনজন। আতঙ্কে ঘরছাড়াও হয়ে যান অনেকেই। যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকারের তরফে একটি সিট গঠন করা হয়। ওই সিটের নেতৃত্বে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত জাফরাবাদে বাবা-ছেলে খুনে চারজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement