মুর্শিদাবাদে অশান্তি নিয়ে ফের বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে অশান্তি নিয়ে আরএসএসকেও নিশানা করেছেন।রাজ্যবাসীর উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে বিজেপি এবং আরএসএসকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, জীবনের জ্বলন্ত সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে অশান্তি বাধিয়ে বিভেদের বিপজ্জনক খেলা খেলছে বিজেপি ও আরএসএস। পাশাপাশি রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার আর্জিও জানিয়ছেন তিনি। শনিবার রাতে সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর খোলা চিঠি প্রকাশ পায়। যেখানে ছত্রে ছত্রে তিনি পদ্মশিবিরের ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতিকে আক্রমণ করেছেন।ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে অশান্ত মুর্শিদাবাদ। প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘরছাড়া বহু মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পাশের জেলায়। কেউ আবার ভিটে মাটি ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন ভিন রাজ্যে। অশান্তির এই আবহে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে শান্তির বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এই অশান্তির ঘটনার জন্য একযোগে আক্রমণ করেছেন বিজেপি এবং আরএসএস-কে। খোলা চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন, “হঠাৎ করে বাংলায় খুব আক্রমণাত্মক বিজেপি, সঙ্গী আরএসএস । বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে কুশ্রী মিথ্যার প্রচার চালাচ্ছে আরএসএস। একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে ব্যবহার করে চলছে বিপজ্জনক খেলা। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে ব্যবহার করে চলছে বিভেদের রাজনীতি’। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘ দাঙ্গার পিছনে থাকা দুর্বৃত্তদের দমন করা হচ্ছে, শান্ত থাকুন। আগুনের সঙ্গে খেলা করতে প্রথমে ওরা রামনবমীকে বেছে নিয়েছিল। কিন্তু বাংলায় রামনবমী পালিত হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। দাঙ্গা বাধাতে চায় বিজেপি ও তার সঙ্গীরা। বিজেপি ও তার সঙ্গীদের কথায় বিশ্বাস করবেন না।” তৃণমূল সূত্রে খবর, চিঠিটি জনসমক্ষে আসার আগেই তা পাঠানো হয়েছিল দলের সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের কাছে। পাঠানো হয়েছিল দলের শাখা সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও। সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, চিঠিতে যে ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী সঙ্ঘ পরিবার ও তার রাজনৈতিক শাখা বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন, সেই ভাষা এবং সেই লাইনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে হবে। প্রয়োজনে এলাকায় এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিটি লিফলেটের আকারে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।এ ছাড়াও পথসভা তথা জনসভাতেও মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতে লেখা বার্তার নির্যাসকে নিজেদের বক্তব্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে আমজনতার কাছে। খোলা চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘‘রাজ্যে যে মিথ্যার প্রচার চলছে তার মূলে রয়েছে আরএসএস।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, প্ররোচনার কারণে ঘটে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে ব্যবহার করে বিভেদের রাজনীতির খেলা খেলতে চাইছে বিজেপি এবং আরএসএস। সেই বিভাজনের কৌশল যেন কোনও ভাবেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে না পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতার নামে কয়েকদিন আগে হিংসা ছড়ায় মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায়। অশান্তির জেরে এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বহু মানুষ। আর যাঁরা কোনওমতে নিজের বাড়িতে রয়ে গেছেন, তাঁরা এক সপ্তাহ পরও আতঙ্ক ভুলতে পারছেন না। এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছেই। এই আবহে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি উপেক্ষা করেই মুর্শিদাবাদের দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকায় যান রাজ্যপাল। যান নিহতের বাড়িতে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বললেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। আবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে না পারায়, বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। শনিবার প্রথমে জাফরাবাদে নিহত হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের বাড়িতে যান রাজ্যপাল। তাঁকে দেখা মাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়ে নিহতের পরিবার।