সংশোধিত ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা। তবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে মুর্শিদাবাদ। জঙ্গিপুর মহকুমার সুতি, ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জের মতো এলাকায় রবিবার রাতে নতুন করে আর অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা স্পর্শকাতর এলাকায় অনবরত রুটমার্চ করছে। গ্রামে গ্রামে টহল দিচ্ছে পুলিশও। যাঁরা অশান্তির আবহে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁদের ঘরে ফেরানোর উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে পুলিশের তরফে। অশান্তির ঘটনায় ইতিমধ্যেই ধরপাকড় শুরু হয়েছে। এলাকায় শান্তি ফেরাতে চলছে রুটমার্চ। হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার ২০০ জনের বেশি। তবে অশান্তির নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। সোমবার তিনি জানান, ‘নতুন করে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখন জঙ্গিপুরে শান্তি বহাল আছে। আমাদের পুলিশে যা যা আছে, পেট্রোলিং, পিকেটিং, এগুলি পুরোদস্তুর চলছে। যাতে মানুষের ভরসা ফিরে আসে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিছু কিছু দোকানপাঠ খুলতে শুরু করেছে। আমার খুবই আত্মবিশ্বাসী যে, খুব তাড়াতাড়ি জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিছু লোকে যাঁরা নিজেদের গ্রাম ছেড়ে অন্য়ত্র চলে গিয়েছিলেন, তাঁরা ফিরছেন। মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে আমরা কাজ করছি’। মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন শৃঙ্খলা)। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে পাতাল থেকে খুঁজে নিয়ে এসে আইনি পদক্ষেপ করব’। জাভেদ শামিম জানান, গত ৩৬ ঘণ্টায় নতুন করে কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। এলাকা শান্তিপূর্ণ। তবে তিনি এও ব্যাখ্যা করেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ মানেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়।’ জেলার বেশ কিছু এলাকায় পুলিশ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখেছে। তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন জাভেদ শামিম। কোনও ভাবেই যাতে গুজব না ছড়িয়ে পড়ে সেই জন্য একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘মানুষ মানসিক ভাবে শান্ত না হলে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে হবে। কারণ তা সমস্যা তৈরি করে। যে যেখান থেকে কোনও সমস্যার খবর পাবেন, আমাদের জানাবেন। আমরা তথ্য যাচাই করে দেখে পদক্ষেপ করব।’ বাইরের রাজ্য থেকেও উস্কানি আসছে বলে জানান তিনি। ওয়াকফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ। নানা জায়গায় অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি সূত্রে দাবি, মৃত্যুও হয়েছে অন্তত তিন জনের। এই পরিস্থিতিতে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এর পর শনিবার রাত থেকে মুর্শিদাবাদের উপদ্রুত অঞ্চলগুলিতে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ অভিযান চলছে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মুর্শিদাবাদের স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। জেলার বিস্তীর্ণ অংশে এখনও ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। জারি রয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা। বেআইনি জমায়েতের অভিযোগে বেশ কিছু এলাকা থেকে রবিবার কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জঙ্গিপুর মহকুমায় অশান্তির মোকাবিলায় বর্তমানে ১৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া, সীমান্ত এলাকায় রয়েছে বিএসএফ। রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত একটি স্পেশ্যাল মনিটারিং দল নীল নকশা (ব্লু-প্রিন্ট) তৈরি করে স্পর্শকাতর তিনটি থানা এলাকায় নিয়মিত টহলদারি চালাচ্ছে। শমসেরগঞ্জের দু’টি, ধুলিয়ান ও সুতি এলাকার একটি করে, মোট চারটি এলাকাকে অতি স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে বাড়তি নজরদারি। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকেরাও জেলায় রয়েছেন। অশান্তিতে কোনও উস্কানি দেওয়া হচ্ছে কি না, তাঁরা দেখছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, সুতি থানা এলাকায় তিন কোম্পানি, শমসেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে সাত কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। ধুলিয়ান পুর এলাকায় পাড়ার মোড়ে মোড়ে চার থেকে ছ’জন সশস্ত্র জওয়ান রয়েছেন। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংযোগকারী জাতীয় সড়কেও তিন কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন রয়েছে।