চাকরি বাতিল ও মুর্শিদাবাদ ইস্যুতে একসাথে পা মেলাল বঙ্গ বিজেপি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিহারা হয়েছেন রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। এই নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। এই প্রেক্ষাপটেই আবার ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে উত্তাল মুর্শিদাবাদ। এই দুই ইস্যুকে হাতিয়ার করে রবিবার পথে নামল বিজেপি। আর সেই কর্মসূচিতে একসঙ্গে দেখা গেল বিজেপির প্রথম সারির নেতৃত্বকে। চাকরি বাতিল ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় অশান্তির অভিযোগকে সামনে রেখে রবিবার কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে গেরুয়া শিবির। এদিনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। শুভেন্দু অধিকারী জানান, কিছুদিনের মধ্যেই বাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তাঁর আগে বঙ্গসফরে এসে চাকরি বাতিল ও মুর্শিদাবাদের অশান্তিকে হাতিয়ার করেই আবারও বাংলার মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করবেন মোদী, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহল। প্রসঙ্গত, এদিনে শুভেন্দু জানিয়েছেন চাকরিহারাদের নবান্ন অভিযানে তাঁদের সমর্থন থাকবে। পাশাপাশি বিজেপির তরফেও নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা কবে, তা ঠিক হবে প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরই। এদিন বামেদেরও নিশানা করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় উত্তাল হয়েছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ান। প্রাণ গিয়েছে তিনজনের। জ্বলেছে পুলিশের গাড়ি, বাড়িঘর, দোকান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার রাত থেকে নেমেছে বিএসএফ। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শনিবার রাত থেকে আধা সেনাও নামানো হয়। সেই ঘটনাকে সামনে রেখেই রবিবার মিছিল করল বিজেপি। এদিকে মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তবর্তী চার জেলায় আফস্পা জারি করার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোর্তিময় সিং মাহাতো। সেই চিঠিতে বাংলায় হিন্দুদের পরিস্থিতির সঙ্গে ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের গণপলায়নের তুলনা টেনেছেন বিজেপি সাংসদ।জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর দাবি, উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রাজ্যের সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সেনা বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন আফস্পা জারি করা হোক। কারণ মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দুদের জীবন বিপন্ন। অনেকেই বাড়ি ঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন। ওই চিঠি নিয়ে বিজেপি সাংসদ বলেন, আর্মড ফোর্স স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট অনুযায়ী ওই চার জেলাকে ঘোষণা করা ও ওই আইন লাগু করার অনুরোধ করেছি। বিজেপি যতদিন এখানে রয়েছে ততদিন পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ করতে দেব না। দিদিকে এখান থেকে বিদায় নিতেই হবে। এদিকে মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। রাজভবন সূত্রে খবর, শনিবার রাজ্যপালের নির্দেশে তাঁর দফতর থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্ত্রকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় যে সব ঘটনা ঘটেছে, সেই সমস্ত ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিবকে ওই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। রাজভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মুর্শিদাবাদে ঘটে চলা ঘটনা প্রসঙ্গে গত কয়েক দিন ধরেই নানা বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন রাজ্যপাল স্বয়ং। শুক্রবার এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বিশদে আলোচনা হয়েছে তাঁর। তার পরেই যাবতীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজভবন থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। রাজভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই চিঠিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে তিনি মুর্শিদাবাদের শান্তি ফেরানোর কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর যে বিস্তারিত কথা হয়েছে, সেই বিষয়টিও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।