রাজতন্ত্রের দাবিতে উত্তাল নেপাল

IMG-20250401-WA0398

নেপালে রাজতন্ত্র ও হিন্দুত্ব ফিরিয়ে আনার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভের জেরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নেপাল জুড়ে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে নেপাল সরকার। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকারের দাবি, প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ-ই ষড়যন্ত্র করে ক্ষেপিয়ে তুলছেন তাঁর সমর্থকদের। যদিও ক্রমশ নেপালে জোরাল হচ্ছে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি। এই অবস্থায় জ্ঞানেন্দ্রকে গ্রেপ্তারির দাবি তুলেছে শাসক জোট। এমনকী রাজার নিরাপত্তায় কাটছাঁট করেছে কেপি শর্মা ওলি সরকার। সব মিলিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি হিমালয়ের পাদদেশে। নেপালের সিপিএনইউএমএল এবং নেপালি কংগ্রেসের জোট বর্তমানে সরকারে। শাসক জোটের দাবি, জ্ঞানেন্দ্রর উসকানিতেই রাজতন্ত্রের দাবিতে পথে নামছেন তাঁর সমর্থকেরা। পরিকল্পনা করেই দেশে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শুক্রবারের বিক্ষোভের পর প্রাক্তন রাজার বাসস্থান কাঠমাণ্ডুর ‘নির্মল নিবাসে’র নিরাপত্তা কমানো হয়েছে। শুক্রবারের বিক্ষোভের আগে ২৫ জন রক্ষী নিযুক্ত ছিলেন। তা কমিয়ে ১৬ জন করে দেওয়া হয়েছে। নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পক্ষে রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি। তাই রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত দিয়েছে নেপাল সরকার। এমনকি দুই শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও রুজু হতে পারে। ইতিমধ্যেই ওই দলের দুই সাংসদ ধাওয়াল সামশের রানা এবং রবীন্দ্র মিশ্রকে দেশ না-ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নেপালের পার্লামেন্টে সে দেশের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের পাসপোর্ট জমা রাখার দাবিও উঠেছে।রাজতন্ত্রের সমর্থক বলে পরিচিত আরপিপি-র সহ-সভাপতি রবীন্দ্র এবং সাধারণ সম্পাদক রানা-সহ শতাধিক অভিযুক্তকে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সোমবার তাঁদের আদালতে হাজির করানো হয়। তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ছাড়পত্র দেন কাঠমান্ডু জেলা আদালতের বিচারক তারাদেবী মহারজন। রানার পরিবারের দাবি, তিনি ক্যানসার আক্রান্ত। চিকিৎসার প্রয়োজনে তাঁর ভারতে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তাঁকে ভারতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। নেপালে রাজতন্ত্র ও হিন্দুত্ব ফিরিয়ে আনার দাবিতে গড়ে ওঠা সাম্প্রতিক আন্দোলনে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি) যোগ দিয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। আন্দোলন পরিচালনার জন্য গড়ে ওঠা ‘জয়েন্ট পিপল্‌স মুভমেন্ট কমিটি’র (জেপিএমসি) নেতৃত্বের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রাক্তন মাওবাদী কমান্ডার দুর্গা প্রসাই। গত শুক্রবার কাঠমান্ডুতে অশান্তির সূচনা তিনিই করেছিলেন বলে পুলিশের অভিযোগ। সে দিন একটি গাড়ি চালিয়ে দুর্গা সজোর ধাক্কা মেরেছিলেন পুলিশি ব্যারিকেডে। আর তার পরেই রাজপথে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। দুর্গার ঘনিষ্ঠ নেতা দেবী সাংরাউলাকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজতন্ত্র-সমর্থকদের ডেরায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। কাঠমান্ডু পুলিশের তরফে সকলকে গুজব না-ছড়ানো এবং গুজবে কান না-দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। গত শুক্র এবং শনিবার থেকে কাঠমান্ডু-সহ সংলগ্ন এলাকায় রাজা জ্ঞানেন্দ্রের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু এবং শতাধিক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনার জেরে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে নেপালের বিস্তীর্ণ অংশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাঠমান্ডু-সহ বিভিন্ন শহরে বলবৎ করতে হয়েছে কার্ফু। রাজতন্ত্র-সমর্থকদের দাবি, রাজার শাসনে ফিরলেই নেপালে স্থিতাবস্থা, শান্তি এবং ঐক্য ফিরে আসবে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement