চাকরি দেওয়ার নাম করে পাঁচ লক্ষ টাকা নেওয়ার পাশাপাশি সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে ইন্টারভিউ এর নাম করে গোপণ ডেরায় নিয়ে গিয়ে এক মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি আব্দুল মান্নানকে তিনদিনের পুলিশে হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। পাশাপাশি তৃণমূলের কোচবিহার জেলা নেতৃত্ব অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা কে ছয় বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করল। বুধবার দলের কোচবিহার জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। এদিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সাংবাদিক বৈঠক করার সময় তার পাশে ছিলেন সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া, বর্ষিয়ান তৃণমূল নেতা কোচবিহার জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। এদিন আব্দুল মান্নান কে দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি তার বদলে বড়আটিয়াবাড়ি ২ অঞ্চলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হল ইয়ানুস মিয়াকে। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় পঙ্কজ মহন্তকে। এদিকে অভিযুক্ত তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দিনহাটার মহিলা থানায় সিপিএমের মহিলা সংগঠন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনহাটা লোকাল সম্পাদিকা সুজাতা চক্রবর্তী বলেন,”যেভাবে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক মহিলাকে তৃণমূল নেতা ধর্ষণ করেছে এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ দিন পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি জানালাম।”এদিকে এ দিন ফের আদালতে তোলা হয় আব্দুল মান্নানকে। তাকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।দিনহাটা আদালতের সরকারি আইনজীবী শুভব্রত বর্মণ জানিয়েছেন, এ দিন তাকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ২২ মার্চ তাকে ফের আদালতে তোলা হবে।অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান পুলিশের ভ্যানে বসে থেকে বলেন,”যারা ষড়যন্ত্র করেছে তারা মিথ্যা বলেছে। তার প্রমাণ রেখে গিয়েছে। যে ব্যক্তি ১৪ ই মার্চ আমার নামে বেলা ১১ টার সময় ধর্ষণের কেস দেয় সে ব্যক্তি কিভাবে বেলা তিনটার সময় দেওয়ানহাট হাসপাতালে থাকে। সেটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন,”তৃণমূল দল দুষ্কৃতীদের আস্থনায় পরিণত হয়েছে। সেই দলে আব্দুল মান্নানদের মত লোক থাকাটাই স্বাভাবিক। আর তৃণমূলের বহিষ্কার আর দলে থাকা আলাদা কিছু নয়। এর আগে অনেক ঘটনা সেটাই প্রমাণ করেছে।সিপিএমের কোচবিহার জেলা কমিটির সদস্য শুভ্রালোক দাস বলেন, গোটা রাজ্যজুড়ে খুন ধর্ষণ সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির আতুঘর তৈরি হয়েছে। সবকিছুতেই অভিযুক্ত রয়েছে তৃণমূল নেতারা। অবিলম্বে এদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত প্রশাসনের।এদিকে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ” দিনহাটা এক ব্লকের বড় আটিয়াবাড়ি ২ অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে এক মহিলাকে ধর্ষণ করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সত্যতা আমরা যাচাই করিনি। যেহেতু তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এসেছে তাই তাকে দল থেকে ছয় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হল। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ইয়ানুস মিয়াকে। আব্দুল মান্নান কে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। তবেই তাকে দলে আবার ফিরিয়ে নেওয়া হবে।প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক মহিলার কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগ ওঠে বড় আটিয়াবাড়ী দুই অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে। চাকরি না হয় পরিবারের পক্ষ থেকে এরপর সেই টাকা চাইতে গেলে ইন্টারভিউ- এর নাম করে ওই মহিলাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে ওই নেতার বিরুদ্ধে। সেই মহিলা দিনহাটা মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে।