সামরিক সাহায্য বন্ধের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের, ক্ষুব্ধ ইউক্রেন

IMG-20250304-WA0265

কয়েকদিন আগেই হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠক করতে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেই বৈঠকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তর্কাতর্কির জেরেই এবার ইউক্রেনকে কোণঠাসা করতে  সমস্ত সামরিক সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর আমেরিকার এই সিদ্ধান্তে বেজায় অসন্তুষ্ট ইউক্রেন।সূত্রের খবর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট  স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন,  তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। তাঁর দৃষ্টি আপাতত সেই দিকেই নিবদ্ধ থাকবে। তাই  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় ইউক্রেনের মানসিকতাও সেটাই হোক।  তাই শান্তি ফেরাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আপাতত ইউক্রেনকে আর সামরিক সাহায্য করবে না। আমেরিকার সিদ্ধান্তকে ভালো চোখে দেখছে না কিভ। ইউক্রেনের সংসদের বিদেশ কমিটির প্রধান ওলেকজ়েন্ডার মেরেঝকো সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, “বিষয়টি দেখতে খুব খারাপ লাগছে। দেখে মনে হচ্ছে ট্রাম্প আমাদের আত্মসমর্পণের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আমরা যাতে রাশিয়ার দাবি মেনে নিই, সেই চেষ্টা চলছে।”ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের প্রকাশ্য বাগ্‌বিতণ্ডার পর থেকেই দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই আবহে মঙ্গলবার ভোরে জানা যায়, কিভকে সামরিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসের এক আধিকারিক সংবাদসংস্থাকে বলেন, “শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে স্থির রয়েছেন প্রেসি়ডেন্ট । আমরা চাই আমাদের বন্ধুরাও সেই একই লক্ষ্যে স্থির থাকুক। আমরা তাই আপাতত সাহায্য বন্ধ রেখে তা পর্যালোচনা করছি, যাতে এর মাধ্যমে কোনও সমাধানের পথ বেরোয়।”জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই  ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার বিষয়ে পূর্বতন মার্কিন নীতির বিরোধিতা করে আসছেন। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে জেলেনেস্কির সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প বারবার যুদ্ধ থামানোর উপর জোর দেন। সেই সঙ্গে জেলেনেস্কিকে সতর্ক করেন, ‘আপনার নীতি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইন্ধন জোগাচ্ছে। ‘ ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে সোজাসুজি বলে দেন, তাদের আমেরিকার  প্রতি আরও কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। ইউক্রেন প্রেসিডেন্টও স্পষ্ট করে দেন , তারা আমেরিকার প্রতি কৃতজ্ঞ, তবে যুদ্ধ থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।  হোয়াইট হাউসের সূত্রে খবর, জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন  শান্তি ফেরানোর প্রতি আগ্রহ না দেখানো পর্যন্ত ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন যে শান্তি প্রচেষ্টার অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনকে কোনও সামরিক সহায়তা দেওয়া হবে না। এর মধ্যে বিমান, জাহাজ এবং অস্ত্র সরবরাহও অন্তর্ভুক্ত। তিন বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। পূর্বতন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জমানায় আমেরিকাকে পাশে পেয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু হোয়াইট হাউসে পালাবদলের পর থেকেই সেই সমীকরণ বদলাতে শুরু করে। রুশ-ইউক্রেন ম্যারাথন সংঘাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সপ্তাহের ওভাল অফিসে আয়োজিত বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে তীব্র বিবাদে জড়ান ট্রাম্প। তারপরেই ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। আমেরিকার সঙ্গে খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্দেশ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন জ়েলেনস্কি। ওই সময়ে ট্রাম্প এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। পরে দু’দেশের যৌথ সাংবাদিক বিবৃতির সময়ে জ়েলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্প এবং ভান্সের তপ্ত বাক্যবিনিময় চলে কিছু ক্ষণ, যা সাম্প্রতিক অতীতে বেনজির। এই বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে ভেস্তে যায় আমেরিকা-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি। শোনা যায়, হোয়াইট হাউস থেকে মধ্যাহ্নভোজ না সেরেই বেরিয়ে যান জ়েলেনস্কি। ওই ঘটনার কয়েক দিন যেতে না-যেতেই ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য পাঠানো আপাতত বন্ধ করে দিল ট্রাম্প প্রশাসন।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement