নয়াদিল্লি: বছর ২০২৫ ভারতীয় ক্রীড়া ইতিহাসের অন্যতম বিশেষ বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেল, যখন ভারত একসঙ্গে বহু খেলায় বিশ্বমঞ্চে নিজের শক্তি ও প্রভাব দেখাতে সক্ষম হলো। ক্রিকেটে ভারতের পুরুষ দল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ জিতে আধিপত্য বজায় রাখে, আর নবি মুম্বাইয়ে ভারতের মহিলা দল প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস রচনা করে। একই সঙ্গে, দাবায় ডি. গুকেশ ও দিব্যা দেশমুখের মতো তরুণ প্রতিভারা নতুন মর্যাদা এনে দেন, আর জ্যাভলিন থ্রোয়ে নীরজ চোপড়া আবারও দেশের সম্মান বাড়ান। প্যারা–ক্রীড়া ও এশীয় গেমসেও ভারতীয় খেলোয়াড়দের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স প্রমাণ করল— ২০২৫ কেবল অর্জনের বছর নয়, বরং ভারত খেলাশক্তি হিসেবে উঠে আসার যাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
এশিয়ান ইউথ গেমস ২০২৫-এ রেকর্ড পারফরম্যান্স:
ভারত এশিয়ান ইউথ গেমস ২০২৫-এ ইতিহাসের সেরা পারফরম্যান্স করে মোট ৪৮টি পদক জেতে— যার মধ্যে ছিল ১৩টি সোনা, ১৮টি রৌপ্য ও ১৭টি ব্রোঞ্জ। এই পারফরম্যান্সের ফলে বহু তরুণ খেলোয়াড় ২০২৬ ইউথ অলিম্পিকসের জন্য যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ পায়। কুস্তি, বক্সিং, অ্যাথলেটিক্স, কাবাডি ও ওয়েটলিফটিং-এ ভারতীয় তরুণরা নজরকাড়া সাফল্য দেখায়।
তিরন্দাজিতে অসাধারণ সাফল্য:
বিশ্ব তিরন্দাজি চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের পুরুষ কম্পাউন্ড দল সোনা জিতে ইতিহাস গড়ে— এটি এই ইভেন্টে ভারতের প্রথম কম্পাউন্ড স্বর্ণপদক। দলে ছিলেন ঋষভ যাদব, প্রভাত সলুঙ্খে ও প্রথমেশ ফুগে — যাদের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য।
এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫
ভারত মোট ২৪টি পদক জিতে সামগ্রিক তালিকায় দ্বিতীয় স্থান দখল করে। ভাঙে একাধিক জাতীয় রেকর্ড। গুলবীর সিং ৫,০০০ ও ১০,০০০ মিটার— দুই ইভেন্টেই সোনা জেতেন। অবিনাশ সাবলে, জ্যোতি ইয়ারাজি ও অন্যান্যরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেন।
শুটিং ওয়ার্ল্ড কাপে ঐতিহাসিক সোনা:
২০ বছরের সম্রाट রানা ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে বিশ্ব খেতাব জিতে নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য অর্জন করেন, যা ভারতের শুটিং ইতিহাসে এক স্মরণীয় মুহূর্ত।
বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫:
গ্রেটার নয়ডায় আয়োজিত ফাইনালে জেসমিন ল্যাম্বোরিয়া নারীদের ৫৭ কেজি বিভাগে সোনা জেতেন। নুপুর সেরন +৮০ কেজিতে রৌপ্য পান। মোট ২০টি পদক (৯ সোনা, ৬ রৌপ্য, ৫ ব্রোঞ্জ) জিতে ভারত ঐতিহাসিক সাফল্য পায়।
খো-খো বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন:
ভারতের মহিলা খো-খো দল ২০২৫ বিশ্বকাপ জিতে দেশকে গর্বিত করে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারত চাইনিজ তাইপেকে পরাজিত করে।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি:
ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ভারতীয় পুরুষ দল তৃতীয়বার ট্রফি জিতে। অধিনায়ক রোহিত শর্মার নেতৃত্বে এই জয় একদিবসীয় ক্রিকেটে ভারতের শক্তি আরও প্রতিষ্ঠিত করে।
দাবায় বিশ্বমানের রেকর্ড:
তরুণ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ডি. গুকেশ ম্যাগনাস কার্লসেন-সহ শীর্ষ খেলোয়াড়দের হারিয়ে বহু সম্মান অর্জন করেন।
মহিলা ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বখেতাব:
ভারতীয় মহিলা দল ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতে। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে হারমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে দল দারুণ আত্মবিশ্বাস ও স্থিরতা প্রদর্শন করে।
প্যারা-তিরন্দাজ শীতল দেবীর কৃতিত্ব:
শীতল দেবী বিশ্ব খেতাব জেতেন এবং জেদ্দায় হতে যাওয়া এশিয়া কাপের (তৃতীয় ধাপ) সাধারণ জুনিয়র দলে জায়গা করে ইতিহাস রচনা করেন।
দৃষ্টিবাধিত মহিলা ক্রিকেট টি২০ বিশ্বকাপ:
কলম্বোয় অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারতীয় দৃষ্টিবাধিত মহিলা দল নেপালকে ৭ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতে।
অন্যান্য ব্যক্তিগত সাফল্য:
দাবায় দিব্যা দেশমুখ ফিদে মহিলা বিশ্বকাপ জেতেন। অ্যাথলেটিক্সে নীরজ চোপড়া ৯০ মিটার অতিক্রম করে নতুন ইতিহাস গড়েন। তাইওয়ান অ্যাথলেটিক্স ওপেনে ভারত সামগ্রিকভাবে শীর্ষে থাকে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্যারা-অ্যাথলেটিক্স বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ভারত ২২টি পদক জেতে, আর ইতালিতে স্পেশাল অলিম্পিক্স উইন্টার গেমসে ভারতের ঝুলিতে আসে ৩৩টি পদক।
নিতেন কির্তানে পিকলবল বিশ্বকাপে ডাবল সোনা জেতেন এবং ভারতের মহিলা আইস-হকি দল এশিয়া কাপে ঐতিহাসিক ব্রোঞ্জ জিতে নতুন অধ্যায় রচনা করে।










