বেআইনি নিয়োগে পার্থ-মুকুলের চাপ, বিস্ফোরক চিত্তরঞ্জন মণ্ডল
শুরু হল শিক্ষা দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই মামলার বিচার প্রক্রিয়া। শুক্রবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ ও গ্রুপ সি মামলার একসঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে এদিন আদালতে সাক্ষ্য দেন প্রাক্তন এসএসসির চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তিনি আদালতে জানান, ‘২০১১ সালের আগে তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সভাপতি ছিলাম। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন বলেই এসএসসির চেয়ারম্যান হয়েছিলাম’। চিত্তরঞ্জন মণ্ডল আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন এসএসসি-র চেয়ারম্যান হতে হবে। তাই তিনি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। ২ বছর ৬ মাস কাজ করার পর ছেড়ে দিয়েছিলাম। কারণ, প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। বেআইনিভাবে চাকরি দিতে বলা হয়েছে। মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামে সরাসরি অভিযোগ জানান তিনি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় চাপ সৃষ্টি করেছেন। বেআইনি চাকরি দিতে বলেছেন। যেহেতু এই সমস্ত জিনিস মেনে নিতে পারেননি, তাই তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। তখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী তাঁকে কাউন্টার প্রশ্ন করেন, আপনি একটি দলের ম্যানিফেস্টো কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জানান, হ্যাঁ, বিজেপির ২০২৪ সালের ইলেকশন ম্যানিফেস্টো কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু, কোনওভাবে বিজেপি নেতা হিসাবে সিবিআই দফতরে যাননি। বয়ান দেননি। তাঁর উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। সিবিআইয়ের আইনজীবী প্রাক্তন চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান, তিনি সরাসরি এসএসসির চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন কি না। বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা তাতে বাধা দেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী ‘রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত’ বলেও মন্তব্য করা হয়। বিচারকও সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বলেন এই মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশ্ন করতে। এর পরেই সাক্ষীর কাছে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানতে চান, ‘‘আপনি কার কথায় এসএসসি চেয়ারম্যানের পোস্ট নিয়েছিলেন?’’ জবাবে প্রাক্তন চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সিএম আমাকে জানান যে, আমাকে চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। তার পরেই আমি জয়েন করি।’’ এতে বাধা দেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘মামলা থেকে এই নাম বাদ দেওয়া উচিত।’’সিবিআইয়ের আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন চেয়ারম্যান জানান, তাঁকে চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। চাপের মুখে পড়ে দু’বছরের মধ্যে, ২০১৩ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। দাবি করেন, মুকুল রায় এবং পার্থ তাঁকে বেআইনি ভাবে নিয়োগের জন্য চাপ দিয়েছিলেন। শুক্রবারের বিচারপ্রক্রিয়ার প্রথম শুনানিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। চোখে কালো চশমা, হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নেন তিনি। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ছিলেন অশোক সাহা, এসপি সিংহ এবং প্রসন্ন রায়। প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে একের পর এক দুর্নীতি মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যায়। শুক্রবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ ও গ্রুপ সি মামলার একসঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়।