দুবাই: বাইশ গজে পাকিস্তানকে ধুলিস্যাৎ করল ভারত। এশিয়া কাপে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সুপার ফোরে টিম ইন্ডিয়া। দুই দলের মধ্যে পার্থক্য ছিল আকাশ-পাতাল। চোখে আঙুল দিয়ে সেটা দেখিয়ে দিল ভারত। এককথায়, বিশ্ব ক্রিকেটে পাকিস্তানের রিয়ালিটি চেক। টি-২০ ক্রিকেটের আদর্শ বিজ্ঞাপন। ফেভারিট হিসেবেই নেমেছিল সূর্যকুমার যাদবের দল। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেট কীভাবে খেলে, সেটা দেখিয়ে দিলেন অভিষেক শর্মা, তিলক বর্মারা। শুরুতে জোড়া উইকেট হারানো সত্ত্বেও, তার প্রভাব ব্যাটিংয়ে পড়েনি। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান করে পাকিস্তান। জবাবে ১৫.৫ ওভারে জয়সূচক রানে পৌঁছে যায় ভারত। ২৫ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে জয়। সম্প্রতি ১৪ ম্যাচের মধ্যে ১১ ম্যাচ জয় ভারতের। আগে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হত। কিন্ত বর্তমানে পুরোপুরি একপেশে ম্যাচ। দুই দলের মধ্যে কোনও সামঞ্জস্য নেই। যা হওয়ারই ছিল। পাকিস্তানের ব্যাটারদের অনেকটা পথ পেরোতে হবে। আল্ট্রা আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে গিয়েই নিজেদের বিপদ ডেকে আনে পাক ব্যাটাররা। একইসঙ্গে ব্যর্থ পাকিস্তানের বোলাররাও। ভারতের তিন উইকেটই তুলে নেন সাইম আইয়ুব। ভারতের ইনিংসে প্রথম দু’বলে চার, ছয়। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে যেখানে শেষ করেছিলেন, ঠিক সেখান থেকে শুরু করেন অভিষেক শর্মা। প্রথম তিন ওভারের মধ্যে জোড়া ছক্কা এবং চার হাঁকান। অন্য প্রান্তে শুরুটা ভাল করেন শুভমন গিলও। জোড়া চার মেরে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সাইম আইয়ুবের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে স্ট্যাম্প আউট হন শুভমন। মাত্র ১০ রান করেন ভারতের সহ অধিনায়ক। অন্য প্রান্তে চতুর্থ গিয়ারে ছিলেন অভিষেক। তবে এদিন বেশিক্ষণ উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি। ব্যাট হাতে শূন্য রানে ফিরলেও, পাওয়ার প্লের মধ্যে দুই ভারতীয় ওপেনারকে ফেরান আইয়ুব। ১৩ বলে ৩১ রানে শেষ হয় অভিষেকের সংক্ষিপ্ত ঝোড়ো ইনিংস। ওভারে দুটো বাউন্ডারি মারার পর ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ফাহিম আশরাফের হাতে ধরা পড়েন। ওপেনিংয়ে দুই বন্ধুর পার্টনারশিপ বেশিক্ষণ টেকেনি। তবে বাকি দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন সূর্যকুমার যাদব এবং তিলক বর্মা। অভিষেকের ইনিংস বাকি ব্যাটারদের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে দেয়। পাওয়ার প্লের শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ভারতের রান ছিল ৬০। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাওয়ার প্লেতে এটাই ভারতের সর্বোচ্চ রান। এর আগে ৬২ সর্বোচ্চ রান ছিল। তৃতীয় উইকেটে ৫৬ রান যোগ করেন তিলক এবং সূর্যকুমার। ৩১ রানে আউট হন তিলক। ততক্ষণে জয়ের দিকে অনেকটাই এগিয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। অধিনায়ক হওয়ার পর রানের খরা চলছিল ভারতের টি-২০ অধিনায়কের। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তেমন সাফল্য নেই। কিন্তু এদিন রানে ফেরেন স্কাই। ১৩ ওভারে ১০০ রান সম্পূর্ণ করে ভারত। ৩৭ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন ভারত অধিনায়ক। ইনিংসে ছিল একটি ছয়, পাঁচটি চার। শুরুতে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন সলমন আঘা। কিন্তু ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে পাকিস্তান। পাক ব্যাটারদের গুণগত মান আগের তুলনায় কম। তারওপর স্ট্র্যাটেজিহীন ব্যাটিং। পরপর উইকেট হারানো সত্ত্বেও বড় শট মারার চেষ্টা চালিয়ে যায় পাকিস্তানের ব্যাটাররা। একমাত্র শাহিবজাদা ফারহান এবং শাহিন আফ্রিদি ছাড়া কেউ দাঁড়াতে পারেনি। টপ অর্ডার ব্যর্থ। বিপক্ষের ইনিংসে প্রথম আঘাত করেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। পাওয়ার প্লেতে জোড়া উইকেট হারায় পাকিস্তান। দ্বিতীয় উইকেট যশপ্রীত বুমরার। এরপর ম্যাচে ফেরার কিছুটা চেষ্টা করে পাকিস্তান। তৃতীয় উইকেটে ৩৯ রান যোগ করে শাহিবজাদা ফারহান এবং ফকর জামান জুটি। এটাই পাকিস্তানের ইনিংসে সবচেয়ে বড় পার্টনারশিপ। বাকিরা এলেন এবং গেলেন। ৪৪ বলে ৪০ রান করেন ফারহান। ইনিংসে ছিল তিনটে ছয় এবং একটি চার। শেষদিকে আফ্রিদির বিধ্বংসী ইনিংস অন্তত পাকিস্তানকে কিছুটা লড়াই করার মতো জায়গায় নিয়ে যায়। ১৬ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত পাক বোলার। স্পিনারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তানের ব্যাটাররা। নিজেদের মধ্যে ছয় উইকেট ভাগ করে নেয় কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল এবং বরুণ চক্রবর্তীর স্পিন ত্রয়ী। তিন উইকেট নেন কুলদীপ। জোড়া উইকেট বুমরা এবং অক্ষরের।