‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ থেকে ‘জওয়ান’ তিন দশকের এক টানা শাসন। ভারতীয় বক্স অফিসের রাজপাট তো বহুদিন আগেই দখল করেছিলেন তিনি, এবার এল দেশের সর্বোচ্চ সিনেমা সম্মানের স্বীকৃতিও। হ্যাঁ, অবশেষে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেতা নির্বাচিত হলেন শাহরুখ খান, তাঁর ৩৩ বছরের কেরিয়ারের প্রথম জাতীয় সম্মান! ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে শাহরুখ খানের নাম ঘোষণা হতে সারা দেশে তাঁর অনুরাগীমহলে শুরু হয়েছে বিজয়োল্লাস। বছরটা এমনিতেই কিং খানের কামব্যাক ইয়ার। ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’ আর ‘ডানকি’— তিনটে সিনেমাতেই ভাঙলেন সমস্ত বক্স অফিস রেকর্ড। শুধু ভারতেই ৭ কোটির বেশি দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে একা এনেছেন শাহরুখ। ভারতের বক্স অফিসে আয় ১৩০০ কোটির বেশি। বিশ্বব্যাপী ২৫০০ কোটির ক্লাব— যা বলিউডে একক নজির। এর মাঝেই ‘জওয়ান’ ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে শাহরুখের বিস্ফোরক অভিনয় নজর কেড়েছিল সমালোচকদেরও। অ্যাকশন, আবেগ, স্টাইল আর স্টেটমেন্ট— একাই একটা ধাক্কা হয়ে এসেছিল ছবিটি। আর এবার সেই কাজটাই এনে দিল জীবনের প্রথম জাতীয় পুরস্কার। আর এই জাতীয় সম্মান পেয়ে ছবি পরিচালক, প্রযোজক, সহশিল্পী এবং অনুরাগীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন বাদশা। এবার এক বিশেষ ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানালেন তিনি। সেই ব্যক্তি শাহরুখের বিশেষ এবং বহু পুরোনো বন্ধু। না, তিনি সলমন খান কিংবা করণ জোহর নন। তাঁর নাম, বিবেক বসওয়ানি।“সব তোর সঙ্গে শুরু হয়েছিল… রাজু অবশেষে জেন্টলম্যান হয়ে উঠল” — শাহরুখ খানের জাতীয় পুরস্কার জয়ের আনন্দে স্মৃতি ছুঁয়ে গেল ‘রাজু বান গয়া জেন্টলম্যান’-এর দিনগুলোকে। ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেতার সম্মান পেলেন বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান। অ্যাটলির সুপারহিট ছবি ‘জওয়ান’-এ তাঁর অনবদ্য অভিনয়ের জন্য এই বিরল সম্মান। অভিনন্দন বার্তায় ভরে উঠেছে নেটদুনিয়া। তবে এক পুরনো বন্ধু, যিনি শাহরুখের বলিউড যাত্রার সূচনায় ছিলেন অন্যতম কাণ্ডারি,তাঁর আবেগঘন বার্তাটি একটু আলাদা।
এক্সে (সাবেক টুইটার) পুরনো একটি ছবি পোস্ট করেন প্রযোজক ও অভিনেতা বিবেক বসওয়ানি। ছবিতে হাসিমুখে শাহরুখ তাকিয়ে আছেন বিবেকের দিকে। ক্যাপশনে লেখেন,“অভিনন্দন শাহরুখ, জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার জন্য! অনেক দেরিতে এল, কিন্তু একেবারেই প্রাপ্য সম্মান!”শাহরুখও দেরি না করে রিপ্লাই দেন: “ধন্যবাদ এই শুভেচ্ছার জন্য। এসবের শুরু তো তোর সঙ্গে হয়েছিল। রাজু অবশেষে জেন্টলম্যান হয়ে উঠল!”‘রাজু বান গয়া জেন্টলম্যান’ থেকেই শুরু হয়েছিল শাহরুখ-বিবেকের দারুণ বন্ধুত্ব। ১৯৯২ সালে বিবেক বসওয়ানির সহ-প্রযোজনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘রজু বান গয়া জেন্টলম্যান’। ওই ছবিতেই প্রথমবার বলিউডে মূলধারার নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শাহরুখ খান। পরিচালক আজিজ মির্জা, প্রযোজক জি পি সিপ্পি। ছবিতে শাহরুখের পাশাপাশি ছিলেন জুহি চাওলা, আমৃতা সিং ও নান পাটেকর। বিবেক নিজেও সেখানে অভিনয় করেছিলেন লাভচাঁদ কুকরেজার চরিত্রে।অবশ্য তাঁদের দু’জনের বন্ধুত্বের শুরু তারও আগে। বিবেকের মুম্বইয়ের বাড়িতে। মুম্বইয়ে প্রথম আসার পরে শাহরুখ দিন কয়েক বিবেক বসওয়ানির বাড়িতেই থাকতেন। বিবেক তাঁকে বলিউডে বিভিন্ন সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করেন। পরবর্তী কালে দু’জনে একসঙ্গে কাজ করেন ‘কিং আঙ্কল’, ‘ইংলিশ বাবু দেশি মেম’, ‘কভি হা কভি না’-র মতো ছবিতে। এইমুহূর্তে আর পর্দায় দেখা যায় না বিবেককে। এখন কোথায় তিনি?বর্তমানে বিবেক বসওয়ানি মুম্বইয়ের একটি ফিল্ম স্কুলের প্রধান। নিজেকে শিক্ষক বলেই পরিচয় দিতে ভালবাসেন তিনি। আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ শাহরুখের সঙ্গে আজকাল আর কথা হয় না। দেখা হলে হয়, না হলে না। ও এখন অনেক -অনেক বড় তারকা। ১৭টা ফোন ওর। আমি একবার ফোন করেছিলাম ‘জওয়ান’-এর পরে। তখন তোলেনি। এরপর যেই বাথরুমে ঢুকেছি, স্নানের জন্য তৈরি হচ্ছি, তখন শাহরুখ পাল্টা ফোন করেছিল। স্বভাবতই আমি তখন তোলার মত অবস্থায় ছিলাম না, তাই কথা হয়নি। যাই হোক, আমাদের দেখা পড়া হয়ই না, কোথাও হয় না। তবে একবাদ যখন আমাদের দেখা হয়, আড্ডায় বসি… মনেই হয় না যে আমাদের এখন আর রোজ আড্ডা হয় না। নিমিষে যেন পুরনো সময় ফিরে আসে। আমি লোকাল ট্রেনে চলাফেরা করি, একটা স্কুলের দায়িত্ব আমার উপর। সেটা আমার জগৎ। আর ও সুপারস্টার। আর এটাই বাস্তব, তাই মেনে নিয়েছি।”










