অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। আর তাকে কেন্দ্র করেই ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে লস এঞ্জেলেস।গত দু’দিন ধরেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সেখানে। বিক্ষোভকে কাবু করার জন্য যাবতীয় প্রয়াস চালানো হলেও উত্তেজনা থামানো যাচ্ছে না। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পরও নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে। অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় ঘিরে শুক্রবার থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়।শনিবারও দিনভর উত্তপ্ত ছিল পরিস্থিতি। রবিবার কয়েক হাজার আন্দোলনকারী পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। মূলত বিশাল সংখ্যায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ন্যাশনাল গার্ড নামিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু তাঁর হুঁশিয়ারিকে আমল না দিয়েই চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। তাতেও পিছিয়ে আসতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। ক্ষুব্ধ জনতা একাধিক গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। শনিবারই বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দিতে দেখা যায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। ট্রুথ সোশাল মিডিয়ায় আক্রমণাত্মক মেজাজে তিনি লিখেছেন, ‘যদি ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসকাম এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস তাঁদের কাজ করতে না পারেন, যা সবাই জানে যে তাঁরা পারবেন না, তাহলে ফেডারেল সরকার হস্তক্ষেপ করবে এবং সমস্যাটির সমাধান করবে। দাঙ্গাকারী এবং লুটেরাদের ক্ষেত্রে যেভাবে সমাধান করা উচিত।’ কিন্তু ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পরেও বিক্ষোভ আটকানো যাচ্ছে না। লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকা অভিবাসীরা ট্রাম্পের নির্দেশ মানতে নারাজ। শনিবার বিক্ষোভ দেখান ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা। ওই দিন তাঁরা যেখানে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন, রবিবার সেখানেই ফের জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভকারীরা সেখানে কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ওই বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলে সব জায়গায় সেনা থাকবে। তাঁদের দেশকে ভেঙে যেতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানিয়েছেন, যাঁরা লস অ্যাঞ্জেলেস দখল করতে চাইছেন তাঁরা অপরাধী। তাঁদের হাত থেকে ওই শহরকে মুক্ত করার জন্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোয়েম, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিদের উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কার করে লস অ্যাঞ্জেলেস মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও ট্রাম্পের এই নির্দেশের বিরোধিতা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম । হোয়াইট হাউসকে ‘বেআইনি ’ সেনা প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেন তিনি। তাঁর দাবি, এই সেনার উপস্থিতি উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করার নিন্দা করেছেন আমেরিকার প্রাক্তন ভাইস প্রসিডেন্ট কমলা হ্যারিস-ও। তবে প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, বিক্ষোভ তীব্র হলে সেখানে মেরিন সেনা মোতায়েন করা হতে পারে।উল্লেখ্য, আমেরিকায় অনুপ্রবেশ রুখতে মরিয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিমধ্যে কড়া আইন এনেছেন তিনি। মার্কিনিদের স্বার্থে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরানোও শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ১১ এপ্রিল থেকে সে দেশে কার্যকর হয়েছে ‘দ্য এলিয়েন রেজিস্ট্রেশন রিকোয়ারমেন্ট’। এবার অভিবাসীদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত নিরাপত্তা বাহিনীর। যা কড়া হাতে দমনের পরিকল্পনা করছে হোয়াইট হাউস। এদিকে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিকে আমল দিতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা। প্রায় ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরুদ্ধে রবিবার নতুন করে উত্তেজনা ছড়াল লস অ্যাঞ্জেলসে।