পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জবাব কিভাবে দেওয়া হবে? এই প্রশ্নে যখন তোলপাড় গোটা দেশ, সেই সময়েই একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জঙ্গি হামলার পর থেকেই প্রায় রোজই বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। সেই রেশ ধরে সোমবার ম্যারাথন বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদী। রবিবার সকালে বায়ুসেনা প্রধান অমলপ্রীত সিং এবং বায়ুসেনার অন্য শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই সোমবার বেলায় প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করলেন মোদী। বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় দু’জনের। পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের আবহে রীতিমতো যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ভারত। পাক সীমান্তে দেখা গিয়েছে বায়ু সেনার মহড়া। এই প্রেক্ষাপটে প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।সরকারি অধিকারিক ও সেনাকর্তাদের সঙ্গে যেমন বৈঠক হচ্ছে, তেমনই আবার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গেও কথা বলছেন নরেন্দ্র মোদী। সোমবার মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দু’দেশের রাষ্ট্র প্রধানের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতকে ‘পূর্ণ সমর্থনে’র আশ্বাস দিয়েছেন পুতিন। দুই দেশের রাষ্ট্র প্রধানের মধ্যে ফোনালাপ নিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি জানান, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশিয়ার ৮০তম বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পুতিনকে। পাশাপাশি ভারতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, পহেলগাঁও হামলার পর এখনও মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে ২৬ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা জঙ্গিরা। এ পর্যন্ত কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি অভিযান ও ধরপাকড় চালিয়েও হামলার মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার বা নিকেশ করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, ২২ এপ্রিল দুপুরে বৈসরন ভ্যালি রিসর্টে হামলা চালায় চারজন। তার মধ্যে দু’জন পাকিস্তানি। বাকি দু’জন কাশ্মীরের বাসিন্দা। চারজনের স্কেচও প্রকাশ হয়েছে। এদের পথপ্রদর্শক হিসাবে আদিল কঠোর নামের এক জঙ্গির নামও প্রকাশ করেছে তদন্তকারী সংস্থাগুলি। এর বাইরে আর কারা যুক্ত সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসবের মধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে কার্যত যুদ্ধের মেজাজে ভারত। আর সেই আবহেই লাগাতার বৈঠক করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।সেই সঙ্গে আর্ন্তজাতিক মহলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন।এর পাশাপাশি পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়ানোর যাবতীয় প্রয়াস চালানো হচ্ছে ভারতের তরফে।
পহেলগাঁও কাণ্ড পরবর্তী সময়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গত ১১ দিন ধরে প্রতি রাতে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে। জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাও। রবিবার রাতেও সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে পাক ফৌজের বিরুদ্ধে। গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের হত্যালীলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মৃতদের মধ্যে ২৫ জনই ছিলেন পর্যটক। ওই ঘটনায় সীমান্তপারের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ ভারতের। যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ১২ দিন কেটে গিয়েছে। তবে হামলায় জড়িত জঙ্গিরা এখনও ধরা পড়েনি। তাদের খোঁজে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে তল্লাশি চালানো হয়।