ভুয়ো ভোটার ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আরও সুর চড়াল তৃণমূল।২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভুল স্বীকার করতে হবে কমিশনকে। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনটাই হুঙ্কার ছেড়েছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন ও সাগরিকা ঘোষরা। পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় বিজেপি শাসিত গুজরাত, হরিয়ানার বাসিন্দাদের নাম থাকা নিয়ে সরব তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভোটার তালিকার বুথভিত্তিক এবং ঠিকানা ভিত্তিক স্ক্রুটিনি চলবে। তিনি এই হুঁশিয়ারিও দেন, মহারাষ্ট্র, দিল্লির মতো চক্রান্ত বাংলার মাটিতে চলবে না। আরও একবার এই বিষয়টিই স্পষ্ট করে দিল তৃণমূল। সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষ ও কীর্তি আজ়াদ। তাঁদের হুঁশিয়ারি, ভুয়ো ভোটার কার্ড ইস্যুতে মঙ্গলবারের মধ্যে ভুল স্বীকার করুক জাতীয় নির্বাচন কমিশন। নইলে আরও নথি প্রকাশ্যে আনা হবে। হশাসক শিবিরের হুঙ্কার, “বিজেপিকে কোনওভাবে গণতন্ত্র নষ্ট করতে দেব না।” রবিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিশন মেনে নিয়েছে যে, একই এপিক নম্বরে ভোটার আইডি কার্ড বা সচিত্র পরিচয়পত্র একাধিক রাজ্যে রয়েছে। তার মানেই সেই সচিত্র পরিচয়পত্র ভুয়ো নয়। সেই নিয়েই সোমবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। ডেরেকদের দাবি, এই ভোটার আইকার্ডগুলির বেশির ভাগই বিজেপি- শাসিত রাজ্যের বাসিন্দাদের। এই প্রসঙ্গে ডেরেক বলেন, ‘‘আমরা চাই, পশ্চিমবঙ্গে কেবল সেখানকার বাসিন্দারাই ভোট দিক। দেখা যাবে, ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না, কারণ, তাঁদের ভোট অন্য কেউ দিয়ে গিয়েছেন, যাঁদের ভোটার আইডি কার্ডের এপিক নম্বর তাঁদেরই মতো।’’ ডেরেক আরও জানান যে, সে ক্ষেত্রে অন্য রাজ্য থেকে ভোটারেরা এসে ভোট দিয়ে যাবে। এটা কিছুতেই মানা যায় না।ভুয়ো ভোটার, একই নম্বরের একাধিক ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে অভিযোগ উঠেছে দেশে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পরিস্থিতিতে রবিবার নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে ব্যাখ্যা দেয় যে, অনেক ক্ষেত্রেই এপিক নম্বর এক হলেও ভোটকেন্দ্র এবং বিধানসভা কেন্দ্র আলাদা হয়। এপিক কার্ডে যে কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে, শুধু সেখানেই ভোট দেওয়া যাবে। অন্য কোথাও নয়। ডেরেক বলেন, ‘‘কমিশনের প্রশংসা করব, তবে সীমিত। কারণ, তারা ভুলের কথা বললেও তার দায় স্বীকার করেনি।’’ তার পরেই তিনি কমিশনের উদ্দেশে বলেন, ‘‘কমিশনকে অনুরোধ করছি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দায় স্বীকার করুন। না করলে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আরও কিছু নথি প্রকাশ করব।’’ এই নিয়ে তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন ডেরেক। সাগরিকা ঘোষের প্রশ্ন, ‘দু’টি রাজ্যের দু’জন ভোটারের একই এপিক নম্বর হয় কি করে? এটা ক্রিমিনাল অফেন্স। অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে। এই চক্রান্তের মাথা কে তা খুঁজে বার করে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের কোন কোন আধিকারিক এর সঙ্গে জড়িত তাঁদেরও খুঁজে বার করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ করে তৃণমূল সাংসদরা বলেন, ‘এই ভাবে আমরা গণতন্ত্র ধ্বংস করতে দেব না। এটা দুর্নীতির খেলা। নির্বাচন কমিশন নিজেদের ত্রুটি স্বীকার করছে না।’ চাঁচাছোলা ভাষায় সাংসদ কীর্তি আজ়াদ বলেন, ‘সিবিআই খাঁচায় বন্ধ তোতা হলে নির্বাচন কমিশন কি খাঁচায় বন্ধ ময়না?’ বিজেপি সংবিধানের অবমাননা করছে বলেও অভিযোগ তাঁর। বাংলার বাসিন্দারা যাতে বাংলাতেই ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন সাংসদরা। কয়েক দিন আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সভায় মমতা অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় রাজ্যের ভোটারদের নামের জায়গায় হরিয়ানা, গুজরাত, পঞ্জাবের বাসিন্দাদের নাম ভোটার হিসেবে নথিবদ্ধ করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে বিজেপি, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার দিকে আঙুল তুলে মমতা দাবি করেছিলেন, বিজেপি ঠিক এই ভাবেই মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে বিরোধীদের হারিয়েছে। এর পরে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ভোটার তালিকা ধরে সমীক্ষার কর্মসূচিতে নেমেছেন। রবিবার কমিশনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে তৃণমূল দাবি করে, এর ফলে মমতার তোলা অভিযোগ মান্যতা পেয়েছে। এ বার তৃণমূলের তরফে দাবি করা হল, এই ভুলের জন্য দায় স্বীকার করতে হবে কমিশনকে।