অ্যাক্সিস ব্যাংকের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস: ২০২৭ অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি বেড়ে ৭.৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, মুদ্রাস্ফীতি থাকবে সংযত

Indian-economy-growing

কাঠামোগত সংস্কার ও বিধিবিধানের সরলীকরণ, ঋণ গ্রহণের ব্যয় হ্রাস, দ্রুততর পুঁজি সঞ্চয় এবং নীতিগত শিথিলতা থেকে সৃষ্ট চক্রাকার সহায়তার ফলে ২০২৭ অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতার তুলনায় বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অ্যাক্সিস ব্যাংক ইকোনমিক আউটলুক ২০২৬ প্রতিবেদনে এই মত প্রকাশ করেছেন অ্যাক্সিস ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং অ্যাক্সিস ক্যাপিটালের বৈশ্বিক গবেষণা বিভাগের প্রধান নীলকণ্ঠ মিশ্র। মিশ্র ও ব্যাংকের অর্থনৈতিক গবেষণা দলের মতে, অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টি না করেই দেশ প্রবণতার ঊর্ধ্বে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
প্রতিবেদনের প্রধান দিকসমূহ:
অ্যাক্সিস ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতিগুলির অন্যতম ভারত ২০২৭ অর্থবর্ষে ৭.৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে—যা দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা ও সামগ্রিক পূর্বানুমান উভয়ের তুলনায়ই বেশি।
এই পূর্বাভাসের ভিত্তিতে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান:
১) রাজস্বচাপের হ্রাস ও সহায়ক আর্থিক নীতি
সরকারি ব্যয়ের ওপর চাপ ক্রমশ কমে আসা এবং অনুকূল আর্থিক নীতির ফলে প্রবণতার তুলনায় ৭.৫ শতাংশ বা তারও বেশি প্রবৃদ্ধি সম্ভব হতে পারে। পাশাপাশি, কাঠামোগত সংস্কার ও বিধিবিধানের সরলীকরণ মধ্যমেয়াদে প্রবৃদ্ধির গতি আরও সুদৃঢ় করবে।
২) মূলধনী ব্যয়ের পুনরুজ্জীবন
আর্থিক অবস্থার উন্নতি, পুঁজির ব্যয় হ্রাস এবং উৎপাদনক্ষমতার উচ্চ ব্যবহার—যার ফলে নতুন মূলধনী বিনিয়োগের প্রয়োজন সৃষ্টি হবে—২০২৭ অর্থবর্ষে মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।
৩) উৎপাদনশীলতা ও পুঁজি গঠনের উন্নতি
মোট উপাদান উৎপাদনশীলতা (টিএফপি)-এর ধারাবাহিক উন্নতি এবং পুঁজি গঠনে পুনরুদ্ধার ৭ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসকে দৃঢ় সমর্থন জোগাচ্ছে।
২০২৭ অর্থবর্ষে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ৪ শতাংশে থাকার সম্ভাবনা; তবে অর্থনৈতিক শৈথিল্য অব্যাহত

মধ্যম মুদ্রাস্ফীতি—যা অন্তর্নিহিত মূল্যচাপের অধিক নির্ভরযোগ্য সূচক—গত ১৮ মাস ধরে প্রায় ৩ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে; এটি অর্থনীতিতে চলমান শৈথিল্যের ইঙ্গিত বহন করে।

অ্যাক্সিস ব্যাংকের অনুমান অনুযায়ী, প্রবণতার ঊর্ধ্বে প্রবৃদ্ধি এবং খাদ্যপণ্যের দামে সম্ভাব্য ঊর্ধ্বগতির পরও ২০২৭ অর্থবর্ষে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ৪ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

নীতিগত সুদের হার সম্ভবত সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে; তবে ঋণপ্রবাহ জোরদার করতে ও আর্থিক সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত করার লক্ষ্যে অর্থের জোগান আরও বৃদ্ধি করা হতে পারে। পাশাপাশি, অধিক ট্রেজারি বিল ও স্বল্পমেয়াদি সরকারি ঋণপত্র ইস্যুর মতো সরবরাহমুখী পদক্ষেপ সুদের হারের কাঠামোগত কঠোরতা কমাতে সহায়ক হবে।

অ্যাক্সিস ব্যাংকের প্রত্যাশা, ২০২৭ অর্থবর্ষে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি ঋণপত্রের সুদের হার ধীরে ধীরে কমে প্রায় ৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
ভারতের বহিঃখাতের ভারসাম্য স্থিতিশীল; ডলারের তুলনায় টাকার দুর্বলতা সহায়ক३

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে প্রকৃত কার্যকর বিনিময় হার (আরইইআর) প্রতিযোগিতামূলক স্তরে অবস্থান করছে।

অ্যাক্সিস ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি হিসাবের ঘাটতি সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৬ অর্থবর্ষে জিডিপির ১.২ শতাংশ এবং ২০২৭ অর্থবর্ষে ১.৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তবে ২০২৬ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে যে উল্লেখযোগ্য মূলধন বহিঃপ্রবাহ দেখা গিয়েছিল, তা ভবিষ্যতে কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement