সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বড় স্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। সারদা চিটফান্ড দুর্নীতি মামলায় তাঁর আগাম জামিন বহাল রাখল শীর্ষ আদালত। তাঁর আগাম জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআইয়ের করা আবেদন শুক্রবার খারিজ করে দেয়। তবে রাজীবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা বহাল থাকছে। আর তার উপর নির্ভর করবে আগাম জামিনের ভবিষ্যৎ।
সারদা-কাণ্ডের তদন্তে রাজ্য সরকারের তৈরি সিটের সদস্য ছিলেন রাজীব কুমার। সারদা চিটফান্ড দুর্নীতির তদন্তে নেমে সিবিআই অভিযোগ করে, সিটের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তদন্তে সহযোগিতা করছেন না রাজীব কুমার। রাজীব কুমারকে হেফাজতে চেয়ে পদক্ষেপ করে সিবিআই। এরপরই ২০১৯ সালের অক্টোবরে কলকাতা হাইকোর্ট রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। তাঁর আগাম জামিনের বিরোধিতা করেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। সেই আবেদন ৬ বছর পর খারিজ করল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গভাই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্ট থেকে পাওয়া রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের আগাম জামিনের বিরোধিতায় মামলা করতে গিয়ে উল্টে সুপ্রিম কোর্টেরই প্রশ্নের মুখে পড়ে সিবিআই৷ ছ’বছর ধরে কেন সিবিআই মামলা করার কথা ভাবল না, কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে সেই প্রশ্নই তুলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই৷ কারণ, এই মামলায় নোটিস রুজু হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর। মাঝে ৬ বছর কেটে গিয়েছে। কোনও ইন্টারিম অর্ডারও এই ৬ বছরে আসেনি। তাই মামলা ডিজপোজ অফ করে সর্বোচ্চ আদালত। তবে পাশাপাশি এও জানানো হয়, মূল মামলার শুনানি তার নিজস্ব মেরিটে করা হবে। ৮ সপ্তাহ পর মামলার শুনানি। রাজীব কুমারের আইনজীবী ছিলেন বিশ্বজিৎ দেব, অভিষেক মনু সিংভি। সিবিআইয়ের হয়ে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
এদিকে এদিন ফের তুষার মেহতা উল্লেখ করেন, সিবিআই অফিসারদের গ্রেফতারের কথা এবং জয়েন্ট ডিরেক্টরের বাসভবনে হামলার কথা। এসজি বলেন, গোটা সিস্টেম, এমনকি মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত ওকে বাঁচাতে নেমে গিয়েছেন। বাড়ি পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। তবে প্রধান বিচারপতি সে সব কথার বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি। উল্টে সলিসিটর জেনারেলের উপর কিছুটা বিরক্তই হন তিনি। জবাবে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছিলেন, সিবিআই তদন্তকারীদের আটক করা এবং সিবিআই অফিসারের বাসভবনে হামলা করার ঘটনার যে মামলা, তার সঙ্গে একসঙ্গে শোনা হোক এই মামলায়। যদিও সলিসিটর জেনারেলের যুক্তি প্রথমে মানতে রাজি হননি প্রধান বিচারপতি৷
এদিকে রাজীব কুমারের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব পাল্টা সওয়াল করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সেরা আইপিএস অফিসারকে হেনস্থা করার জন্য, বদনাম করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে রাজীব কুমার এই আগাম জামিন পাওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁকে কুকুরের মতো ধাওয়া করা হয়েছে। কিন্তু অক্টোবর ২০১৯ থেকে একবারও ডাকা হয়নি রাজীব কুমারকে। তিনি বারবার চিঠি লিখে সিবিআইকে তদন্তে সহযোগিতা করার কথা বলার পরও সিবিআই তাঁকে একবারও তলব করেনি।’ মামলা খারিজ করার আর্জি জানান তিনি। শেষ পর্যন্ত সলিসিটর জেনারেলের দীর্ঘ অনুরোধের পর অবশেষে মামলা খারিজ না করে শুনতে রাজি হয় সর্বোচ্চ আদালত৷ অবশেষে সেই আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট।এদিকে শীর্ষ আদালত সূত্রে খবর, আট সপ্তাহ পর মামলার ফের শুনানি হবে বলে এদিন সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে।