প্রবীণদের মানসিক যত্ন ও সংযোগের গুরুত্বের ওপর বিশেষ আলোকপাত
কলকাতা: বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে মণিপাল হাসপাতাল, ইএম বাইপাস আয়োজিত করেছিল একটি অনন্য আলোচনা সভা, যার মূল বিষয় ছিল প্রবীণদের মানসিক সুস্থতা, অন্তর্দৈহিক শান্তি এবং পারস্পরিক সংযোগের গুরুত্ব। এই ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশনটি পরিচালনা করেন ডা. কুনাল সরকার, ডিরেক্টর- কার্ডিওভাসকুলার ও থোরাসিক সার্জারি, মণিপাল হাসপাতাল, মুকুন্দপুর ক্লাস্টার এবং মিস সোহিনী সাহা, কনসালট্যান্ট- সাইকোলজিস্ট, মণিপাল হাসপাতাল, ইএম বাইপাস। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসকবৃন্দ ডা. আবির মুখার্জি, কনসালট্যান্ট- সাইকিয়াট্রি, মণিপাল হাসপাতাল, মুকুন্দপুর; ডা. অরিজিৎ দত্ত চৌধুরী, কনসালট্যান্ট- সাইকিয়াট্রি, মণিপাল হাসপাতাল, ইএম বাইপাস; এবং ডা. অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়, কনসালট্যান্ট- সাইকোলজিস্ট, মণিপাল হাসপাতাল, ইএম বাইপাস। এই আলোচনায় প্রবীণদের মানসিক ও আবেগজনিত চ্যালেঞ্জ, সমসাময়িক জীবনের দ্রুত পরিবর্তনশীল গতি এবং একাকীত্বের প্রভাব নিয়ে গভীর আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডা. আবির মুখার্জি বলেন, “উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও দীর্ঘায়ুর ফলে ভারতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা একদিকে দেশের অগ্রগতির প্রতিফলন হলেও, অন্যদিকে এটি নতুন মানসিক ও সামাজিক সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, মানসিক বিভ্রান্তি ও ডিমেনশিয়ার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রবীণদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে। একাকীত্ব, পারিবারিক ভাঙন, আর্থিক নির্ভরশীলতা ও সামাজিক কলঙ্ক এই সমস্যাগুলিকে আরও গভীর করে তুলছে। প্রাথমিক সচেতনতা, সহানুভূতি এবং সময়মতো হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমরা প্রবীণদের জন্য এমন এক সমাজ গড়ে তুলতে পারি যেখানে তাঁরা মর্যাদা, মানসিক শান্তি ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাঁচতে পারেন।”
ডা. অরিজিৎ দত্ত চৌধুরী বলেন, “চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মানবজীবনের আয়ু যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বয়সজনিত মানসিক সমস্যাও, যেমন বিষণ্ণতা, ডিমেনশিয়া ও উদ্বেগ। এসব ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক রোগনির্ণয়, ওষুধ ও প্রয়োজনে মনোচিকিৎসা প্রবীণদের জীবনের মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
ডা. অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বার্ধক্য কোনো অসুখ নয়, বরং এটি জীবনের এক স্বাভাবিক ও অনিবার্য অধ্যায়। প্রতিটি মানুষের জন্য এই পর্বটি আলাদা। পরিচর্যাকারী বা পরিবারের সদস্যদের উচিত প্রবীণদের এই পরিবর্তনের সময়ে সহানুভূতি ও মর্যাদা দিয়ে পাশে থাকা। তাঁদের শারীরিক সমস্যাকে অতিরঞ্জিত না করে, সংবেদনশীলভাবে দেখার প্রয়োজন।”

ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশনের সঞ্চালক মিস সোহিনী সাহা বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য একটি সার্বজনীন অধিকার। আমাদের প্রবীণদের যত্ন ও সহায়তার পাশাপাশি তাঁদের মর্যাদা ও আবেগজনিত সুস্থতার নিশ্চয়তা দিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনাকে কলঙ্ক ও নীরবতার গণ্ডি থেকে বের করে সহমর্মিতা ও বোঝাপড়ার পরিসরে আনতে হবে। পরিবার, পরিচর্যাকারী ও সমাজ – সবার মিলিত প্রচেষ্টায় এমন এক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব, যেখানে আবেগজনিত সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের পথ খোঁজা হবে। প্রকৃত সুস্থতা তখনই আসে, যখন মানুষ নিজেকে মূল্যবান, শ্রুত ও সংযুক্ত অনুভব করে।”