কলকাতা: ধস নামার ফলে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। দার্জিলিং, কালিম্পঙের একাধিক রাস্তা বন্ধ। একইসঙ্গে মিরিকের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়েছে শিলিগুড়ির যোগাযোগ। এসেছে একাধিক মানুষের মৃত্যুর খবরও। উদ্ধার কাজে নেমেছে এনডিআরএফ। এই পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে এবার উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নিয়ে শিলিগুড়ি রওনা দেবেন তিনি, অন্তত এমনটাই সূত্রে খবর। অন্যদিকে এই ধস নামার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আপাতত যা পরিকল্পনা তাতে সোমবারই মমতা পৌঁছবেন উত্তরবঙ্গে। সঙ্গে যাবেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। দুপুর ২টো নাগাদ শিলিগুড়ি পৌঁছে যাবেন তাঁরা। সেখান থেকে তিনি উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানান। রবিবারই তিনি উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং কালিম্পঙের জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। সেখানকার কী পরিস্থিতি তা সম্পর্কে পুঙ্খনাপুঙ্খ বিবরণও শুনেছেন জেলাশাসকদের তরফ থেকে। জেলাশাসকদের কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্ট পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী জানান,’উত্তরবঙ্গে ধস নেমেছে। সিকিম, ভুটান জলে ভরে গিয়েছে। গোটা এলাকায় কার্যত তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের হাতে নেই। আমি মর্মাহত। আমি ৫ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছি। আমায় ডিজি ফোন করেছিলেন সকালে। আমি সকাল ৬টা থেকে মনিটরিং করছি। ওখানে ১২ ঘণ্টা ধরে এক টানা বৃষ্টি হয়েছে। ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মিরিক, দার্জিলিং, কালিম্পং মিলিয়ে মোট ৭টি ল্যান্ডস্লাইড হয়েছে। মিরিকের একটি আয়রন ব্রিজ এবং দার্জিলিঙের আরও একটি সেতু ভেঙেছে। কলিম্পঙের রাস্তাও বন্ধ। জাতীয় সড়কে ধস নামার ফলে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিস্তা, রঙ্গীতের জল উপচে পড়েছে। আলিপুরদুয়ার, ধূপগুড়ি, নাগড়াকাটা,মালবাজারে অনেক জল জমেছে টানা বৃষ্টিতে। ঠিক যেমন কলকাতায় হয়েছিল। এই এলাকাগুলিকে অ্যালার্ট করা হয়েছে।’ এর পাশাপাশি তিনি এও জানান, ‘অনেক ট্যুরিস্ট আটকে রয়েছে। যে যেখানে রয়েছে সেখানেই থাকুন। তাঁদের কারও বাড়তি হোটেল ভাঙা দেওয়ার জন্য যেন হোটেল মালিকরা চাপ না দেয়। সেটা প্রশাসন দেখে নেবে। সমস্ত পর্যটকদের নিরাপদে নিয়ে আসা হবে।’ তবে এই ঘটনার জন্য মমতা দায়ী করেছেন প্রকৃতিকে অবহেলা করে পাহাড়ে বাড়ি বানানো ও গাড়ি চালানো নিয়ে। এই প্রসঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘দিনের পর দিন হয়তো প্রকৃতিকে অবহেলা করার জন্যই এমনটা হচ্ছে। পাহাড়ে কীভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করা হয় সেটাও আপনারা জানেন। দার্জিলিং, কালিম্পঙের পাহাড় শক্ত। কিন্তু মিরিকে বেবি পাহাড়। খোদাই করে করে সেই নতুন পাহাড়ে বাড়ি তৈরি করলে তো সমস্যা হবেই। পাহাড়ে এমনিতেই ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে বলা হয়।’
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এও জানান, ইতিমধ্যেই এনডিআরএফ উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। সমস্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে। অন্য রাস্তা দিয়ে উদ্ধারকারী টিম পাঠানো হয়েছে। পর্যটক কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে সেগুলি নতুন করে বানিয়ে দেওয়া হবে এবং মৃতদের পরিবার প্রতি আর্থিক সাহায্য এবং পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে প্রশাসন সূত্রে খবর, যে সব পর্যটকরা দার্জিলিঙের বিভিন্ন এলাকায় বেড়াতে গিয়ে ধসের জেরে আটকে পড়েছেন, তাদের জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করল দার্জিলিং পুলিশ। এই হেল্পলাইন নম্বর হল ৯১৪৭৮ ৮৯০৭৮। এই নম্বরে ফোন করলে সরাসরি দার্জিলিং পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে সহায়তা মিলবে। উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি বলেন, ‘দার্জিলিঙে ব্রিজ ভেঙে একাধিক মৃত্যুর ঘটনায় আমি শোকাহত। যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের সমবেদনা জানাই। আহতরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। দার্জিলিং এবং সংলগ্ন এলাকার পরিস্থিতি মনিটর করা হচ্ছে। সমস্ত রকমের সাহায্যের জন্য আমরা প্রস্তুত।’ একইসঙ্গে নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেল থেকে পাহাড়ের হোটেল ব্যবসায়ীদের কড়া বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অনেকেই পাহাড়ে আটকে আছেন। এমন অবস্থায় কোনও হোটেল ব্যবসায়ী যেন কোনও পর্যটকের থেকে অতিরিক্ত কোনও অর্থ না নেন সেই বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করতে বলেন। আটকে থাকা পর্যটকদের খরচ রাজ্যের বলেও উল্লেখ করেন তিনি।প্রসঙ্গত, শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে দার্জিলিং, মিরিক থেকে একাধিক উত্তরবঙ্গের এলাকা। নবান্নের কন্ট্রোলরুম থেকে কড়া নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই একটি সিনিয়র আইএএস আধিকারিকদের দল উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয়েছে বলে খবর।