যাদবপুরে ছাত্রী মৃত্যু ঘিরে উঠল একাধিক প্রশ্ন, সামনে এল নিরাপত্তারক্ষীদের গাফিলতির ঘটনাও

1750324482phpieJC7E_480x360

ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশ্ন উঠেছে দুটি ইস্যুতে। রাত ১০টার পরেও কেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তা নিয়ে। সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মদের আসর বসেছিল কি না তা নিয়েও। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নং গেটের কাছে থাকা ঝিলে পড়ে যান তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা করা যায়নি। ছাত্রীর মৃত্যুর পরই উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন। মৃত ছাত্রীর মা-বাবাও বিশ্ববিদ্যালয়কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার কাঁটাপুকুর মর্গে ময়নাতদন্ত হয় ছাত্রীর দেহের। ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ার ইনকোয়েস্ট করা হবে। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।  ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মামলা রুজু হবে।
এদিকে সূত্রে খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ড্রামা ক্লাবের আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল পার্কিং লটে। সেই অনুষ্ঠান দেখতেই এসেছিলেন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। জানা গিয়েছে, তাঁর বাড়ি নিমতায়। এরপর রাত ৯টা ৫৫ মিনিট নাগাদ শৌচালয়ে যাওয়ার জন্য ওঠেন ওই ছাত্রী। এরপরই পার্কিং লটের উল্টো দিকে থাকা গভীর ঝিলে পড়ে যান কোনওভাবে।
জোরে লাউড স্পিকার বাজায় এবং অনুষ্ঠানের জন্য বড় লাইটগুলি নিভিয়ে রাখায় ছাত্রীর আর্তচিৎকার যেমন কারোর কানে পৌঁছায়নি। পাশাপাশি তাঁকে পড়ে যেতেও দেখেননি কেউ। প্রায় ১০ মিনিট জলে ভাসার পর ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক শুশ্রষার চেষ্টা করা হয়। এরপর পাশেই কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই মদের আসর বসেছিল। ঘটনাস্থলের কাছ থেকে একটি মদের বোতল উদ্ধারও হয়। এখানে বড় প্রশ্ন একাংশের মনে, ওই ছাত্রীও মদ্যপ ছিলেন কি না, তা নিয়ে। ময়নাতদন্তের পরই সে বিষয়ে জানা যাবে। তবে কেন শৌচালয়ের বদলে ওই ঝিলের দিকে গেলেন ছাত্রী, তাঁর সঙ্গে কেউ ছিলেন কি না, এই ধরনের নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। রাত ১০ টার পরও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাউল গানের অনুষ্ঠান চলছিল, সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।
এদিকে সূত্রে এও জানা গিয়েছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় লাইটগুলি অফ রাখা হয়েছিল। রাত ১০টা ৫ মিনিট নাগাদ যখন ছাত্রীকে ঝিল থেকে উদ্ধার করা হয়, তখন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেপিসি হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকে রাত ১০টা ২৬ মিনিট নাগাদ। ততক্ষণে ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
এই প্রশ্নও উঠছে যে একেবারে নিরাপত্তারক্ষীদের ঘরের পাশেই এই ঘটনা ঘটেছে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরদারি কোথায় তা নিয়েও। সিসিটিভি বসানো থাকলেও, তা বাইরের দিকে মুখ করা। গোটা ক্যাম্পাসে সিসিটিভি বসানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি এখনও।
এদিকে এদিন পুকুর থেকে ওই ছাত্রীকে যাঁরা উদ্ধার করেছিল, তাঁদের সঙ্গে কথাও বলন তদন্তকারী আধিকারিকেরা।
কী অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছিল, উদ্ধারের সময় জীবিত ছিল কি না, তাঁকে ঝিলে পড়ে যেতে কেউ দেখেছিল কি না, সেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও দোলের সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের মৃত্যু হয় জলে ডুবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। রাত হলেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মদের আসর বসার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। নারকোটিক্স ব্যুরোর রেইডও হয়। এবারের ঘটনা আরও একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েই দিল।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement