আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও মেয়ো রোডে সেনাবাহিনীর ধর্না কর্মসূচিতে অংশ নেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ সেই কারণে এবার তাঁকে সতর্ক করল কলকাতা হাইকোর্ট৷ এর পাশাপাশি বিচারপতি পর্যবেক্ষণে আরও জানান, ‘সভায় কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি গ্রাহ্য করে না কলকাতা হাইকোর্ট৷ সেনা জওয়ানদের প্রতি আদালতের ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা রয়েছে৷ কিন্তু তাঁদের কোনও বিষয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি আদালত গ্রহণ করে না৷’
শুক্রবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের পর্যবেক্ষণ, ‘নির্দেশে পরিষ্কার বলা ছিল প্রাক্তন সেনাকর্মীদের এই ধর্না কর্মসূচিতে ভারতীয় জনতা পার্টির কোনও নেতা-নেত্রী হাজির থাকতে পারবেন না। তা সত্ত্বেও কারও যদি এই নির্দেশ বুঝতে অসুবিধা হয় এবং পরবর্তী কালে ফের যদি কেউ আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করেন, তাহলে আদালত কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে৷’
গত ১ সেপ্টেম্বর ধর্মতলায় গান্ধিমূর্তির পাদদেশে ধর্না মঞ্চ তৈরি করছিল তৃণমূল৷ বাংলা ভাষার অপমান এবং বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার প্রতিবাদ কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল এই মঞ্চ থেকে। কিন্তু সেদিন দুপুরে হঠাৎ সেনাবাহিনী ওই মঞ্চ খুলে দেয়। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি সেনাবাহিনীকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে৷
এরপরই সেনাবাহিনীর তরফে পাল্টা দাবি করা হয়, মঞ্চ খোলার অনুমতির কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণেই মঞ্চ খুলে ফেলা হয়েছে ৷ খোলার আগে বিষয়টি বারবার আয়োজক সংস্থাকে জানানো হয়েছে৷
এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়৷ সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে গান্ধি মূর্তির পাদদেশে প্রাক্তন সেনাকর্মী আধিকারিকরা ধর্নায় বসার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ৷ আদালত ১১ সেপ্টেম্বর ধর্নায় অনুমতি দেয়৷ তবে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ নির্দেশে জানিয়েছিলেন, ২০০-২৫০ জনকে নিয়ে ধর্না করা যাবে৷ বিজেপির কোনও নেতা-নেত্রী ওই জায়গায় জমায়েত করতে পারবেন না৷ মামলাকারীকে তাঁদের কয়েকজন ভলান্টিয়ারের নাম পুলিশকে আগে থেকে জানাতে হবে৷
এদিন সকালে রাজ্য পুলিশের পক্ষের আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, মেয়ো রোডে সেনাবাহিনীর আধিকারিকদের ধর্না কর্মসূচিতে আদালতের নির্দেশ মানা হয়নি৷ আদালত অবমাননার জন্য পদক্ষেপ করা উচিত হাইকোর্টের৷ তিনি ওই মঞ্চের ছবি আদালতের কাছে দেখান৷
সেনার পক্ষে আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য জানান, বিরোধী দলনেতা মঞ্চে ওঠেননি৷ তিনি ফুটপাতে অল্প সময়ের জন্য ওই স্থানে হাজির ছিলেন৷ পাশাপাশি তিনি আরও জানান, এই মামলার আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে৷ ফলে এখন এখানে আদালত অবমাননার অভিযোগ করা যায় না৷
এরপর বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান, আপাতত সতর্ক করা হচ্ছে সবাইকে৷ তবে ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কড়া পদক্ষেপ করবে আদালত৷