শিলিগুড়ি: লস্কর-ই-তইবা, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, সিমি, অনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি) এবং জইশ-ই-মহম্মদ, চিকেন নেককে টার্গেট করে ভারতে সন্ত্রাস ছড়াতে পাঁচ জঙ্গি সংগঠন নেপালে ঘাঁটি করে তাদের স্লিপার সেল পুনর্গঠন এবং প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করেছে। কয়েক মাস আগেই দিল্লি থেকে সেই মর্মে বার্তা পৌঁছায় কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর কাছে। নেপাল লাগোয়া বিহারের কয়েকটি এলাকায় নিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়েছে বলেও বার্তা দেয় এনআইএ (NIA)। সেইমতো নেপালে নজরদারি বাড়ান ভারতীয় গোয়েন্দারা। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, বসে যাওয়া এবং এক সময়ের সক্রিয় স্লিপার সেল সদস্যদের খোঁজ শুরু করেছে জঙ্গিরা। সেই সদস্যদের অনেকেই নেপালের বিভিন্ন জেলে বন্দি ছিল। দেশজুড়ে অস্থিরতার সুযোগে নেপালের জেলগুলি থেকে এখনও প্রায় ১৪ হাজার বন্দি পালিয়ে গিয়েছে। তাদের মধ্যে কতজন জঙ্গি বা স্লিপার সেলের সদস্য রয়েছে সেটাই আপাতত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের।
অস্থিরতার সুযোগে জঙ্গি নেতারা যে তাদের সদস্যদের জেল থেকে মুক্ত করে গোপন ডেরায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাকর্তা। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই যাদের জেল থেকে মুক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে লস্করের স্লিপার সেলের অন্যতম নিয়োগকারী মহম্মদ ওমর এবং ওসমান নামে দুই জঙ্গি আছে। কাঞ্চনপুর, চিতওয়ান, জলেশ্বর এবং দিল্লিবাজার নেপালের চার জেলে বন্দি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের তিন শতাধিক সদস্য ইতিমধ্যেই পালিয়ে গিয়েছে। আপাতত নেপাল ছেড়ে তারা ভারত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গা-ঢাকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। একসঙ্গে ফের স্লিপার সেলের ওই সদস্যরা সক্রিয় হলে জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। নেপাল সীমান্তে দীর্ঘদিন কাজ করা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিক এস চৌধুরীর বক্তব্য, ‘চিকেন নেক থেকে নেপাল সীমান্ত খুবই কাছে। তাছাড়া নেপাল থেকে শিলিগুড়ি বা বিহারে সহজেই ঢোকার বহু রাস্তা আছে। তাই জেল পালানো জঙ্গিদের ভারতে ঢুকতে খুব বেগ পেতে হবে না। তবে ভারত হয়ে বাংলাদেশে যাওয়াটা এই মুহূর্তে কঠিন। চিকেন নেক-ই বরাবর জঙ্গিদের টার্গেট। তাই কেন্দ্রীয় এজেন্সির পাশাপাশি রাজ্য পুলিশকেও সতর্ক থাকতে হবে।’
কিছুদিন আগেই জইশের তিন জঙ্গি নেপাল থেকে বিহারে ঢুকেছিল। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা তখনই স্লিপার সেল পুনর্গঠন নিয়ে বড় পরিকল্পনা হয়েছে। নেপালের বন্দি পালানোর ঘটনার পরই ত্রিপুরা, অসম ও মেঘালয়ের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দাদের একাংশের আশঙ্কা, নেপাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ওই তিন রাজ্যের সীমান্ত দিয়েও বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে জেল পালানো জঙ্গিরা। নেপালের ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও নিরাপত্তা দুই-ই বাড়ানো হয়েছে বলেই জানিয়েছেন বিএসএফের ইস্টার্ন কমান্ডের এডিজি মহেশকুমার আগরওয়াল। তাঁর কথা, ‘নেপালের ঘটনায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট আমরা পেয়েছি। সেইমতো পদক্ষেপও করা হয়েছে।’
নেপাল থেকে পালিয়ে জঙ্গিরা লুকিয়ে থাকতে পারে সেই আশঙ্কায় গত দু’দিনে বিহারের সমস্তিপুরের পাঁচটি জায়গা, দ্বারভাঙ্গার ফসিহর, মধুবনির বাসোপট্টি এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছেন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। এক বেসরকারি বাসচালককে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরখেরি, পিলিভিট হয়ে স্লিপার সেলের জঙ্গি সদস্যরা ভারতে ঢুকতে পারে বলেও সতর্ক করেছে কেন্দ্র। শিলিগুড়ির নেপাল সীমান্তকে স্পর্শকাতর বলে বার্তা পাঠানো হয়েছে এসএসবি’র কাছে। নেপালের জেল থেকে পালানো বাংলাদেশভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন এবিটি’র তিন-চারজন সদস্য শিলিগুড়ি হয়ে কেরলে গা-ঢাকা দেওয়ার ছক কষেছে বলেও খবর পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
সেইমতো পদক্ষেপও করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিকের বক্তব্য, ‘নেপালের জেলে এমন কয়েকজন জঙ্গি ছিল যারা স্লিপার সেল বিশেষজ্ঞ। কীভাবে নিয়োগ করতে হবে, কীভাবে প্রশিক্ষণ হবে সবেতেই তারা দক্ষ। সেই জঙ্গিরা ফের সক্রিয় হলে তা চিকেন নেকের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে।’