জেন জি-র আন্দোলনের মুখে নেপালে কেপি শর্মা ওলির সরকারের পতন ঘটেছে। এবার নেপালের রাশ কার হাতে থাকবে, এই নিয়ে জল্পনা চরমে। বুধবার রাতেই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেপালের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকির নাম উঠে এসেছিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে। আন্দোলনকারী তরুণ প্রজন্মই কারকির নাম প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দৌড়ে নাম উঠে আসে কুলমান ঘিসিংয়ের। নেপালে বিদ্যুতের সমস্যা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। ৫৪ বছরের কুলমান প্রাক্তন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি সূত্রে এই নাম নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। জ়েন জি আন্দোলনকারীদের তরফে দাবি করা হয়েছে, ঘিসিং একজন দেশভক্ত এবং সকলের প্রিয়। কুলমান ঘিসিং সেই দেশের ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের প্রাক্তন প্রধান ছিলেন। তিনি বিদ্যুতের সঙ্কট মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার নেপালের ওলি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামে জেন জি। এরপর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন কেপি শর্মা ওলি। বহু নেতামন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় মন্ত্রীদের। তারপরেও অশান্তি থামেনি। ওলির পদত্যাগের পর নেপালের ক্ষমতা এখন সেনার হাতে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতা হিসেবে দেশটির প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকির নাম উঠে আসে। কিন্তু বৃহস্পতিবার নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দৌড়ে নাম উঠে আসে কুলমান ঘিসিংয়ের। ১৯৯৪ সালে ঘিসিং দেশের বিদ্যুৎ বোর্ডে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর থেকে নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ বোর্ডের সর্বেসর্বা হন। সে সময় চরম বিদ্যুৎবিভ্রাটে ভুগছিল ভারতের প্রতিবেশী দেশ। কখনও কখনও দিনে ১৮ ঘণ্টাও লোডশেডিং চলত। সেই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বোর্ডের হাল ধরেন ঘিসিং। মেটান দেশের বিদ্যুৎসঙ্কট। এ বার সেই ঘিসিংকেই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য পছন্দ করেছে নতুন প্রজন্ম। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে তাঁর নাম জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে বুধবার রাত পর্যন্তও শোনা যাচ্ছিল ৭৩ বছরের সুশীলা কারকির নাম। গুরুত্বপূর্ণ এই পদের জন্য সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে চাইছিলেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার এ নিয়ে কাঠমান্ডুতে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের বৈঠক হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণরা অনলাইনে আলোচনাসভায় যোগ দেন। কয়েক ঘণ্টা আলোচনার পর পাঁচ হাজারেরও বেশি আন্দোলনকারী শেষমেশ বেছে নেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সুশীলাকে। এ-ও কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, খুব শীঘ্রই নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে সুশীলার নাম ঘোষণা করতে চলেছে সে দেশের সেনা। কিন্তু বৃহস্পতিবারই চিত্রটা পাল্টে যায়। আন্দোলনকারীদের একাংশ মনে করছেন, বয়সজনিত কারণে সুশীলা এই পদের জন্য উপযুক্ত নন। তারপরেই নেপালের রাশ ঘিসিংয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেয় জেন জি।