গত ২৬ জুন দিল্লি থেকে অসম সীমান্তে নিয়ে গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি-সহ বীরভূমের ছ’জন পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে পুশব্যাক করা হয় ৷ এদিকে তাঁরা তিন পুরুষ ধরে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মুরারইয়ের পাইকরে বাস করছেন৷ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে এমনটাই জানান রাজ্যের আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়৷
এদিকে এই শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অর্থাত এএসজি অশোক চক্রবর্তী ফের দাবি করেন, সোনালি বিবিরা বাংলাদেশি৷ এদিন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ, কেন্দ্র ও রাজ্য-সহ সব পক্ষকে আদালতে এই সংক্রান্ত হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দেয়। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ফের এই মামলার শুনানি৷
রাজ্যের আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে জানান, সোনালি বিবিদের ধরার পর নিয়ম অনুযায়ী দিল্লি পুলিশের উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা৷ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক তাঁদের সম্পর্কে যাবতীয় খোঁজখবর নিয়ে এক মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য বা নথি পাঠাবেন৷ এরপর যদি দেখা যায়, তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় নথি নেই বা প্রমাণপত্র নেই, তখন তাঁদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার পথ রয়েছে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে মাত্র দু’দিনের মধ্যে এফআরআরও সে সব কিছু না-করে তাঁদের অসম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়৷ রাজ্য সরকার সমস্ত প্রমাণপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও দিল্লি পুলিশকে ইমেল করেছে৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার কোনও জবাব দিল্লি প্রশাসন দেয়নি৷ এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলেও আদালতে দাবি করেছেন মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী৷
অন্যদিকে, কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী এদিন ফের দাবি করেন, দিল্লি হাইকোর্টে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ সেই তথ্য সম্পূর্ণ চেপে গিয়ে কলকাতা হাই কর্টে ফের হিবিয়াস করপাসের মামলা দায়ের করা হয়৷ কোন আইনে এটা করা হল এবং দিল্লি হাইকোর্টে এই দু’টি পরিবার তাঁদের নির্বাসনের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করে ফের কেন তা প্রত্যাহার করে তারপর কলকাতা হাইকোর্টে এসে মামলা দায়ের করল এ প্রশ্নও এদিন তাঁকে করতে দেখা যায়৷ পাশাপাশি এএসজি এও জানান, আসলে এরা বাংলাদেশি৷ নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি৷
পাল্টা মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘কেন্দ্রই হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে ২৪ জুন দিল্লি পুলিশ তাঁদের আটক করে৷ তারপর তাঁদের কাছ থেকে নথিপত্র চাওয়া হয়৷ তাতে পুলিশ সন্তুষ্ট না হয়ে ২৬ জুন তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বীরভূমের মুরারইয়ে থাকেন৷ নির্বাসনে পাঠানোর আগে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করার নিয়ম মানাই হয়নি৷ এমনকী সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পরিষ্কার জানিয়েছে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷’
এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টে৷ সেই শুনানিতে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন এএসজি অশোক চক্রবর্তী৷ পাশাপাশি দিল্লি পুলিশের পক্ষে আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী৷ তাঁরা আদালতে অভিযোগ করেন, সোনালি বিবি ও তাঁর পরিবারের তরফে তাঁদের পুশব্যাক করা নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়েরের সময় সেই তথ্য গোপন করা হয়৷ এভাবে তথ্য গোপন করে মামলা দায়ের করা যায় কি না সেই প্রশ্নও তোলেন দুই আইনজীবী৷ তাঁদের কথায়, কলকাতা হাইকোর্টে ফের মামলা দায়ের আইন বিরুদ্ধ৷ মামলা খারিজ করে দেওয়া উচিত৷
এদিকে আবার গত শুনানিতে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়ে মামলাকারী সোনালি বিবির বাবাকে ভর্ৎসনা করে৷ তাঁরা হাইকোর্ট থেকে মামলা প্রত্যাহার করে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন কি না তা জানাতে নির্দেশ দেন৷ তবে এদিন অবশ্য মামলাকারীর তরফে জানানো হয়, তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে কোনও ভুল করেননি৷ বরং দিল্লি প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ম না-মেনে অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি ও তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে ফেরত পাঠিয়েছে৷ এটা আইনানুগ নয়৷ তাই এই মামলা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ ওঠে না৷