দিনহাটা: দিনহাটা সহ জেলার অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপুজো গুলির মধ্যে অন্যতম প্রাচীন পুজো গোসানিমারি কামতেশ্বরী মন্দিরের পুজো। আধুনিকতার ছোঁয়ার বাইরে নিয়মনিষ্ঠাই এই পূজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাজআমল থেকেই এখানে ঘট বসিয়ে পুজো হয়ে থাকে। দুর্গাপুজোর জন্য নেই কোন আলাদা মূর্তি। মহালয়ের পরদিন পুজো শুরু হয়। সপ্তমী থেকে শুরু হয় যজ্ঞ। পুজোর চারদিন দিনরাত এই যজ্ঞের আগুন জ্বলে। নানা পৌরাণিক কাহিনীর অলক্ষ্যে কামতেশ্বরী মন্দিরের পুজোর ইতিহাস। এলাকার বাসিন্দাদের জেলা পরিষদের সদস্যা শ্রাবণী ঝাঁ, মিঠুন চক্রবর্তী, মৃত্যুঞ্জয় দেবশর্মা, সোমনাথ চক্রবর্তী, রাখাল রায় প্রমুখ জানান, মন্দিরের পূজো শুরু থেকেই বহু মানুষ বাইরে থেকে আসেন। এই পুজো তে নিয়ম নিষ্ঠাই মূল বৈশিষ্ট্য। রাজ আমলের প্রথম ইনি এই পুজো হয়ে আসছে। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন প্রয়োজন এসে পুজো দেন।
রাজ আমলের জৌলুস অনেকটা হারিয়ে গেলেও নিয়ম মেনে প্রতিপদ থেকেই বলি দিয়ে দুর্গাপুজা শুরু হয় প্রাচীন এই মন্দিরে। ১৬৬৫ সালে কোচবিহারের মহারাজা প্রাণনারায়ন স্বপ্নাদেশে গোসানিমারি মন্দির তৈরি করেন। তখন থেকেই দুর্গাপুজা হয়ে আসছে এখানে।গোসানিমারি কামতেশ্বরী মন্দির কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রাধীন। মন্দিরের সেবায়িত কালীনাথ ঝা, পরিতোষ ঝা জানিয়েছেন, রাজ আমলের নিয়ম মেনে প্রতিপদের দিন মন্দির প্রাঙ্গণে ঘট বসিয়ে জোড়া পায়রা বলি দিয়েই পুজার সূচনা হয়। এরপর আমাবস্যা ,সংক্রান্তি, অষ্টমী, চতুর্দশী তিথিতে জোড়া পায়রা বলি দেওয়া হয়। অষ্টমীর দিন হয় মহিষ বলি। রক্ত ছাড়া দেবীর পুজো অসম্পূর্ণ।নিয়মানুসারে দশমীতে রক্তপাত নিষিদ্ধ। তাই ওইদিন চাল কুমড়ো বলি হয়। প্রতিপদের আগের দিনই পরিষ্কার করে তেল, সিঁদুর মাখানো হয় হাড়িকাঠে। অষ্টমীর দিন স্নান করিয়ে, গলায় লালশালু জড়িয়ে কপালে তেল, সিঁদুর দিয়ে একটি মহিষকে চাপানো হয় হাড়িকাঠে। বলির পর সেই রক্ত উৎসর্গ করা হয় দুর্গাদেবী মা গোসানিকে।গোসানীমারী কামতেস্বরী মন্দিরের সেবায়িত পরিবারের সদস্য শিক্ষক প্রদীপ ঝা বলেন, ” এই মন্দিরের পুজো জেলার অন্যতম প্রাচীন পুজো।বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার নির্ঘন্ট মেনে এই পুজো হয়। মহা অষ্টমীর দিন মহিষ বলি হয় , নবমীতে আমিষ ভোগ ,দশমীর দিন চাল কুমড়া বলী হয়। রাজ আমলের প্রাচীন এই মন্দিরের পুজোতে ২২ জায়গার জল ও মাটি ব্যবহৃত হয়। স্থায়ী মূর্তি থাকায় এখানে কলাবউ ও পুজো সামগ্রী নৌকায় করে মানসাই নদীতে সাত পাক ঘুরিয়ে বিসর্জন হয়।রাজ আমলের জাকজমকতা এখন আর সেভাবে চোখে না পড়লেও এই পুজো দর্শনের পরই শুরু হয় অন্য প্রতিমা দর্শন। সেই রীতি আজও চলছে। কোচবিহার ছাড়াও আসাম, ডুয়ার্স অন্যান্য জায়গা থেকে পুজো দেখতে আসেন বহু মানুষ।