এসএসসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে স্কুল সার্ভিস কমিশন জানাল, কোনও দুর্নীতিগ্রস্থ অযোগ্য প্রার্থী পরীক্ষায় বসতে পারবে না, ‘অন রেকর্ড’। এদিন এসএসসি পরীক্ষার দিন না পিছোলেও বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ ফের শুক্রবার স্পষ্ট করে দেয়, কোনও ভাবেই অযোগ্যরা ৭ সেপ্টেম্বর এবং ১৪ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় বসতে পারবে না। পরীক্ষার উপর যে কড়া নজর রাখছে কোর্ট, সে কথাও ফের মনে করিয়ে দেওয়া হয় আদালতের তরফে।একই সঙ্গে এও জানানো হয়, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের জন্য যে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে, সেখানে এগজেম্পশন যেটা সর্বোচ্চ আদালতের তরফে দেওয়া হয়েছে, সেটা লাগু থাকবে।
এদিন স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতকে জানান, অনলাইন আবেদনে যখনই কোনও অযোগ্য প্রার্থী নজরে আসছে, তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার আগে এবং পরীক্ষার পরও দেখা হবে কোনও অযোগ্য প্রার্থী ভুলবশত পরীক্ষায় বসে গিয়েছেন কিনা। পাশাপাশি এদিন কল্যাণ এও বলেন, এসএসসির তরফে ১৯০০-র মতো অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা ৭ দিনের মধ্যে তো বটেই, সম্ভব হলে শনিবারের মধ্যেই এসএসসির তরফে প্রকাশ করে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের তরফ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।‘ এরপর শুক্রবার এই ইস্যুতে ফের শুনানি হয়। আর এদিন শুনানি চলাকালীন ফের এই একই প্রসঙ্গ ওঠে আদালতে। শুধু তাই নয়, রাজ্যের হয়ে সওয়াল করা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যও এদিন রেকর্ড হয়। এরপরই এদিন, আদালতে নিজের বক্তব্য রেকর্ড করে আইনজীবী কল্যাণ জানান, এসএসসি পরীক্ষায় বসতে পারবে না কোনও চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্ত। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা স্থগিত করার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের আবেদন ছিল তাঁরা যোগ্য প্রার্থী। এদিকে এদিন শুনানির সময় মামলাকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এখনও অযোগ্যদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছে। এই মামলার শুনানি চলছে এখন আদালতে।
শুক্রবার এই শুনানির সময় আদালতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়াল করতে গিয়ে জানান, ‘যদি কোনও চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্ত ঘটনাচক্রে অ্যাডমিট কার্ড পেয়েও যায় তার পরীক্ষা বাতিল করা হবে। পরীক্ষার পর ধরা পড়লেও খারিজ করা হবে তাঁকে।’ এর পাশাপাশি শুনানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব আইনজীবীকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবেদন করে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা যদি জানতে পারেন এমন কোনও চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্ত অ্যাডমিট কার্ড পেয়েছেন, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড-কে চিঠি লিখে জানান।’
এরপরই বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘নিজের বক্তব্য রেকর্ড করান।’ কল্যাণ অন রেকর্ড বলেন, ‘যদি কোনও চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্ত ঘটনাচক্রে অ্যাডমিট কার্ড পেয়েও যান, তাঁর পরীক্ষা বাতিল করা হবে। পরীক্ষার পর ধরা পড়লেও খারিজ করা হবে তাঁকে।’ একইসঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘আমাদের উপর ভরসা রাখুন।’ পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে কল্যাণ জানান, শনিবারের মধ্যেই চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করার চেষ্টা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ৪৫ শতাংশ নম্বর পাওয়ার পর অনেকে নবম দশমের পরীক্ষার জন্য আবেদন করলেও একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির জন্য আবেদন করতে পারছেন না, এই অভিযোগ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কয়েকজন চাকরি প্রার্থী। একই সঙ্গে অযোগ্যরা অ্যাডমিট কার্ড পেয়ে যাচ্ছেন এই অভিযোগও তোলা হয়।
এদিন শুনানিতে এই প্রসঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘সকলকেই পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছে।’ কোর্টের নির্দেশ, “যাঁরা আবেদন জমা দিতে পারেননি, তাঁরা ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সশরীরে গিয়ে হার্ডকপি জমা দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।’ এদিকে আবার বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও পরীক্ষা স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দিতে দেখা যায় সুপ্রিম কোর্টকে।
এদিকে এই তালিকা কতটা সঠিক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। এই প্রসঙ্গে তাঁর সন্দেহ, হয়ত অর্ধেক তালিকা প্রকাশ করতে পারে এসএসসি। শুধুমাত্র কোর্টের থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই এটা করতে পারে তারা।এর পাশাপাশি বিকাশ এও জানান, ‘ওরা এত দিন আপ্রাণ চেষ্টা করেছে দুর্নীতি চাপা দেওয়ার জন্য। ওরা ভেবেছিলেন এই রকম সময় কাটিয়ে পার পেয়ে যাবেন। এখন সুপ্রিম কোর্ট ঘাড়ে চেপে আছে, উপায় নেই তাই বলছে শনিবারের মধ্যে প্রকাশ করবে।’