ছাব্বিশে বিজেপিকে এক ছটাক জমি ছাড়বো না: অভিষেক

IMG-20250828-WA0148

২০২৬ -এর বিধানসভা ভোটযুদ্ধের দামাম বেজে গিয়েছে ২১শে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকেই। যে দামামা বাজিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর সেই সুর যেন আরও উচ্চগ্রামে বাঁধলেন অভিষেক বৃহস্পতিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে। মেয়ো রোডের সভাস্থল থেকে অভিষেকের স্পষ্ট ভাষায় জানান, ৬৯ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারের জন্য লড়াই করেছেন তাঁরা। একইসঙ্গে এও জানালেন, এ বার ১০ কোটি বঙ্গবাসীর জন্য তাঁরা লড়বেন। আর তারই রেশ ধরে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতেও ভোলেননি তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। সরাসরি বিজেপির উদ্দেশ্যে জানান, ‘ক্ষমতা থাকলে আগামী বিধানসভা ভোটে তারা যেন ৫০ পার করে দেখায়।’ এরই রেশ ধরে তিনি এও বলেন, ‘ আমরা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও-এর রাজনীতি করি না। আমরা সাজিয়ে দাও, গড়ে দাও-এর আদর্শ অনুসরণ করি। ২০২৬-এ বিজেপিকে এক ছটাক জমি ছাড়ব না। ইডি, সিবিআই, বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম আমাদের বিরুদ্ধে কিন্তু বাংলার ১০ কোটি মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে।’ এর পাশাপাশি ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন, এসআইআর থেকে শুরু করে সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করানো, বাংলাভাষীদের হেনস্থা, বিচার ব্যবস্থার একাংশের ভূমিকা, বাংলার অপরাজিতা বিল আটকে দেওয়া নিয়ে এ দিন সোচ্চার হতেও দেখা যায় অভিষেককে। মঞ্চে উপস্থিত তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজই এ দিন বুঝিয়ে দিচ্ছিল, বিনা যুদ্ধে এক ছটাক মাটিও ছাড়তে রাজি নন তিনি। এ লড়াই বাংলার ১০ কোটি মানুষের সঙ্গে, ‘বাঙালি অস্মিতা’র সঙ্গে দিল্লির ক্ষমতার লড়াই। এই প্রসঙ্গেই খুব স্বাভাবিক ভাবে সামনে আসে এসআইআর প্রসঙ্গও। আর এসআইআর প্রসঙ্গেও বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, ‘বিজেপির সরকার এসআইআর করে আমাদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে ৷ আগে সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের সরকার বেছে নিত ৷ আর বর্তমান কেন্দ্রের সরকার নিজেদের শাসনের স্থায়িত্ব বাড়াতে দেশজুড়ে ভোটার বেছে নিচ্ছে৷ এর বিরুদ্ধে বাংলা লড়বে৷’ এরই পাশাপাশি ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে তৃণমূলের লড়াই যে আগামিদিনে আরও জোরালো হতে চলেছে, তার স্পষ্ট বার্তাও এ দিন দিয়ে রাখলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সাফ বার্তা: একজনেরও মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হলে ১০ লক্ষ লোক নিয়ে দিল্লির রাজপথ ঘেরাও হবে। বাংলার মানুষকে কোনও ভাবে ছোট করার চেষ্টা করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে রাজ্যের বিচারব্যবস্থার একাংশের সমালোচনা করতেও শোনা যায় অভিষেককে। আর এই প্রসঙ্গেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, বিচারব্যবস্থা থেকে কেন্দ্রীয় এজেন্সি সবাই তৃণমূল বিরোধী৷ সঙ্গে এও বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে শিক্ষা দিতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারব্যবস্থার একাংশ বাংলা ছাত্র-যুব সমাজের জীবনে অন্ধকার নামিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সেই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ পেয়েছি। শীর্ষ আদালতের অনুমতি পাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে সরকার প্রক্রিয়া চালু করেছে৷’পাশাপাশি এদিন অপরাজিতা বিল কেন পাশ হচ্ছে না তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন অভিষেক৷ তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজ্যের সরকার মন্ত্রিসভা ও বিধানসভায় পাশ করিয়ে অপরাজিতা বিল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছিল৷ যাতে এরকম নারকীয় ঘটনার কোনও পুনরাবৃত্তি বাংলা-সহ দেশের কোনও মাটিতে না ঘটে৷ আজ একবছর হয়ে গিয়েছে সেই অপরাজিতা বিল রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন৷ কিন্তু এখনও সেই বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মেলেনি।’  এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে একযোগে বিজেপি থেকে সিপিএমকে নিশানা করতেও দেখা যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ তিনি বলেন, ‘যারা সেদিন রাস্তায় নেমে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ করেছিল তাদের উদ্দেশ্য ছিল, শুধু দোষী শাস্তি পাক তা নয়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল, রাজ্যের মানুষের স্বার্থে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ২০১১ থেকে করেছে, সেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ভেঙে ফেলা৷ না-হলে আজকে সেই সিপিএম, কংগ্রেস আর বিজেপি বন্ধুদের আওয়াজ অপরাজিতা বিল নিয়ে উঠছে না কেন? তারা কেন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে মিটিং মিছিল করছে না যে, এই বিল অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে পাশ করতে হবে৷’ 

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement