বাংলায় পরিচালকের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে: বিবেক 

hq720

‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’-এর ট্রেলার লঞ্চে বাধা দেওয়া অভিযোগ। অভিযোগ তুললেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। ই এম বাইপাসের এক পাঁচতারা হোটেলে এই ছবির ট্রেলার লঞ্চ ও সাংবাদিক সম্মেলনের কথা ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বিপত্তি। টিজার রিলিজের সময়েই শুরু তুমুল বিতর্কের।  ইতিমধ্যেই রাজ্যের নানা প্রান্তে পরিচালকের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এফআইআর। জল গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এবার ফের বিতর্কে বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’।বিতর্ক পিছু ছাড়ল না ট্রেলার লঞ্চেও।  বাইপাসের ধারে একটি বিলাবহুল হোটেলে এদিন ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানেই অনুষ্ঠানের মাঝে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর  অভিযোগ, ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’-এর ট্রেলার চলাকালীনই তার ছিঁড়ে দিয়ে তা বন্ধ করে দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। যদিও হোটেল জানাচ্ছে, এই অভিযোগ ফুত্কারে উডি়যে দিয়েছে। সঙ্গে এও জানিয়েছে এসব দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন। তারা শুধু কথা বলতেই গিয়েছিল ছবির টিমের সঙ্গে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, দু-পক্ষের বিস্তর তর্কাতর্কির পর এবার কলকাতা পুলিশ হোটেলে ঢুকে সরিয়ে নিয়ে  আসেন বিবেক অগ্নিহোত্রী-সহ দ্য বেঙ্গল ফাইলস-এর গোটা টিমকে।তবে শনিবার সকাল থেকেই হোটেল চত্বর পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ ছিল। অনেকেই বলাবলি করছিল, কিছু একটা ঝামেলা হতে পারে আঁচ করতে পেরেই নাকি নিরাপত্তা আঁটসাঁট করেছে রাজ্য প্রশাসন। বিবেকের অভিযোগ, রাজনৈতিকভাবে এমন আচরণ করা হচ্ছে। পরিচালক আরও বলেছেন, এদিন স্টেজে যখন ট্রেলার চলছিল, তখনই হঠাৎ তার ছিঁড়ে দেওয়া হয়। ট্রেলার চলতে চলতেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। যদিও হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন কিছুই করা হয়নি, কেবল কথা বলতে গিয়েছিল তারা। কলকাতা কর্পোরেশনের অনুমতি নেই বলেও জানিয়েছে এই পাঁচতারা হোটেল।হোটেলে দাঁড়িয়েই বিবেক প্রশ্ন তোলেন পুলিশ ও রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে। বলেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের শহরে পরিচালকের কণ্ঠস্বর রোধ করা হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে রাজনৈতিক চাপে এই আচরণ করা হচ্ছে।’এদিকে শাসকদল তৃণমূলের পাল্টা দাবি,  পেমেন্টের সমস্যা। কিন্তু এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিজেপি। বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ভারতবর্ষের গণতন্ত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা অন্যতম স্তম্ভ। পশ্চিমবঙ্গে একটা সিনেমা কেন করা যাবে না? কেন একটা ট্রেলার দেখানো যাবে না? সত্যকে কি এভাবে চাপা দিয়ে রাখা যায়? আজ সেই ১৬ অগস্ট ১৯৪৬ সালে যেদিন সুরাবর্দি ডাইরেক্ট অ্যাকশনের ডাক দিয়েছিল। ৪০ হাজার হিন্দু বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই সত্যের উপর তৈরি করা সেই ছবি যদি আজকে দেখানো হয় তাহলে তাতে ভয় পাচ্ছে কেন এই রাজ্যের শাসকদল? বোঝাই যাচ্ছে এই ভয় তাঁদের পরাজয়ের ভয়।তবে চুপ নেই শাসকদল তৃণমূলও। বিবেক অগ্নিহোত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বিবেককে বিদ্ধ করে বলেন, ‘উনি প্রতিটা সিনেমার সময় এই সস্তার নাটক করেন। ওনার সিনেমা তো এমনিতে লোকে দেখে না। তাই এসব ফুটেজ খেয়ে সিনেমা হিট করানোর চেষ্টা করেন। এ নাটক কাশ্মীর ফাইলসের সময়েও হয়েছে। এটা কমন স্ট্র্যাটেজি। কিন্তু এই সস্তার নাটকে এবার চিঁড়ে ভিজবে না। সম্ভবত উনি যে পাঁচতারা হোটেল বুক করেছিলেন সেখানে পেমেন্ট নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। ফুল পেমেন্ট পায়নি বলে হোটেল কর্তৃপক্ষ বোধহয় বারণ করেছে।বিতর্কে সুর চড়িয়ে তৃণমূল মুখপাত্র তন্ময় ঘোষ বলেন, ‘বেঙ্গল ফাইলসে সম্পূর্ণভাবে ইতিহাস বিকৃত করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে বাংলার মানুষ এ সিনেমাকে এখানে চলতে দেবে না। আগামী দিনে আরও বিক্ষোভ হবে। ওনাদের মাথায় থাকা উচিত কোন মাটিতে দাঁড়িয়ে এ সিনেমা বানিয়েছেন। এটা বাংলার মাটি, প্রগতিশীলতার মাটি, এটা বিপ্লবের মাটি, স্বাধীনতা আন্দোলনের মাটি। এটা বাঙালি অস্মিতাকে ধাক্কা দিচ্ছে। বাংলার সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে। সম্প্রতির সংস্কৃতিকে উস্কে দিচ্ছে। বাংলায় যেখানে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা চলে, মৃণাল সেনের সিনেমা সেখানে এই ধরনের প্রোপাগান্ড সিনেমা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না।’

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement